
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাব আলোচনায় বসতে দোহায় একত্র হন হামাস নেতারা। ঠিক সেই সময়, ৯ সেপ্টেম্বর ইসরায়েল একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় হামাস নেতাদের ভবনে। দোহা আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠতে দেখা যায়।
অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান হামাসের রাজনৈতিক শাখার শীর্ষ নেতারা। তবে নিহত হন হামাস নেতা খলিল আল-হায়ার ছেলে, আরও পাঁচজন নিরাপত্তারক্ষী এবং কাতারের একজন নিরাপত্তাকর্মী।
আরব বিশ্বের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
কাতারের মাটিতে ইসরায়েলের এই সরাসরি হামলার ঘটনায় নড়েচড়ে বসে উপসাগরীয় দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাতারের কৌশলগত সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও এ হামলার অনুমতি বা পূর্বতথ্য হোয়াইট হাউসকে জানানো হয়েছিল বলে খবর ফাঁস হয়। এতে আরব নেতারা বিকল্প নিরাপত্তা ব্যবস্থা খোঁজার আলোচনা শুরু করেন।
১৫ সেপ্টেম্বর, দোহায় জরুরি বৈঠক ডাকে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) ও উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থা (জিসিসি)। ৬০টির মতো দেশের প্রতিনিধিরা সেখানে উপস্থিত হয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সম্মিলিত অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান।
জিসিসির যৌথ প্রতিরক্ষা ঘোষণা
১৯ সেপ্টেম্বর দোহায় অনুষ্ঠিত জিসিসির বিশেষ অধিবেশনে ঘোষণা করা হয়, যেকোনো বিদেশি হামলার জবাবে তারা যৌথ প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেবে। এটি কার্যত ‘ন্যাটো ধাঁচের’ আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা কাঠামোর ইঙ্গিত দেয়।
এর আগে ১৭ সেপ্টেম্বর সৌদি আরব ও পাকিস্তান কৌশলগত যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা ‘আরব ন্যাটো’ বা ‘মুসলিম ন্যাটো’ ধারণাকে আরও জোরালো করে তোলে।
আরব ন্যাটোর ধারণা নতুন নয়
-
২০১৫ সালে মিসর প্রথম আরব ন্যাটোর প্রস্তাব দিয়েছিল, তবে নেতৃত্ব ও সদর দপ্তর নিয়ে মতবিরোধে উদ্যোগটি ভেস্তে যায়।
-
একই বছরে ইয়েমেনে হুতিদের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বে জোট গঠিত হলেও তা সীমিত পরিসরে কার্যকর হয়।
-
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে (২০১৮) যুক্তরাষ্ট্রও আরব সামরিক জোট গঠনের চেষ্টা চালিয়েছিল। তাতে উপসাগরীয় ছয় রাষ্ট্র, মিসর ও জর্ডানকে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল। মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের প্রভাব মোকাবিলা।
কেন এখন আবার সামনে এলো?
-
কাতারে ইসরায়েলি হামলা – কাতারের সার্বভৌমত্বে সরাসরি আঘাত।
-
ইসরায়েলের আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা – “গ্রেটার ইসরায়েল” পরিকল্পনায় ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়া ও জর্ডান অন্তর্ভুক্ত।
-
গাজার যুদ্ধ ও গণহত্যা – আরব জনমনে ক্ষোভ তীব্রতর।
-
সৌদি–পাকিস্তান প্রতিরক্ষা চুক্তি – বহুপক্ষীয় সামরিক জোটের সম্ভাবনাকে সামনে আনে।
জটিল বাস্তবতা
তবে আরব ন্যাটো গঠনের পথে রয়েছে অনেক বাধা:
-
নেতৃত্ব কার হাতে থাকবে—সৌদি, মিসর নাকি অন্য কেউ?
-
সদর দপ্তর কোথায় হবে?
-
তুরস্ককে অন্তর্ভুক্ত করা হবে কি না, এ নিয়ে মতবিরোধ।
-
অতীতে জিসিসি যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি (২০০০) থাকলেও, বাস্তবে সৌদি ও আমিরাতে হুতিদের হামলার সময় কোনো ঐক্যবদ্ধ সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
-
অভ্যন্তরীণ বিভাজন—যেমন ২০১৭ সালে কাতারের বিরুদ্ধে সৌদি ও কয়েকটি দেশের অবরোধ আরোপ।
কাতারে ইসরায়েলি হামলার পর উপসাগরীয় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ নতুন মাত্রা পেয়েছে। আরব ন্যাটো বা মুসলিম ন্যাটো ধারণাটি এখন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি আলোচিত। তবে ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থ, ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং নেতৃত্ব সংকটের কারণে এই উদ্যোগ সফল হবে কি না—সেটি এখনো অনিশ্চিত।