ঢাকা,  শনিবার
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Advertisement
Advertisement

কাতারে হামলার পর তুরস্ক–ইসরাইল সম্পর্ক টানটান, সরাসরি সংঘর্ষের আশঙ্কা

প্রকাশিত: ১৭:২০, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কাতারে হামলার পর তুরস্ক–ইসরাইল সম্পর্ক টানটান, সরাসরি সংঘর্ষের আশঙ্কা

তুরস্ক ইসরায়েল

কাতারের ওপর ইসরাইলি হামলার পর তুরস্ক–ইসরাইল সম্পর্ক নতুন করে তীব্র সংকটে পড়েছে। আঙ্কারা ও তেলআবিবের মধ্যে মৌখিক আক্রমণ এখন সরাসরি সামরিক সংঘর্ষের আশঙ্কা জাগিয়েছে।

পটভূমি ও ইসরাইলি নীতি পরিবর্তন
৭ অক্টোবর ২০২৩-এ গাজার আল-আকসা স্টর্ম অভিযানের পর থেকে ইসরাইল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া কৌশল গ্রহণ করে। দুই বছরে তারা ফিলিস্তিন (গাজা), লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন, ইরান ও সর্বশেষ কাতারে আক্রমণ চালিয়েছে। দোহায় হামাস নেতাদের টার্গেট করা আক্রমণকে অনেক বিশ্লেষক তুরস্কের উদ্দেশে দেওয়া একটি সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখছেন।

রাজনৈতিক উত্তেজনা

  • নেতানিয়াহু জেরুজালেমকে চিরকাল ইসরাইলের দাবি করে এরদোয়ানকে চ্যালেঞ্জ জানান।

  • এরদোয়ান পাল্টা জবাবে বলেন, জেরুজালেম কখনো “অননুমোদিত হাতের” দখলে যাবে না এবং নেতানিয়াহুকে হিটলারের উত্তরসূরি বলে আখ্যা দেন।

  • আর্মেনীয় গণহত্যা প্রসঙ্গে নেতানিয়াহুর অবস্থান ও সিরিয়ায় দুই দেশের ক্রমবর্ধমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা সম্পর্ককে আরও তিক্ত করেছে।

ন্যাটোর ভূমিকা ও কৌশলগত বাস্তবতা
তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য হলেও অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ইসরাইল যদি তুরস্ককে “সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক” বলে আখ্যা দেয়, তবে তাদের আক্রমণকে আত্মরক্ষা হিসেবে উপস্থাপন করতে পারে। ফলে ন্যাটোর সদস্যপদ স্বয়ংক্রিয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করে না।

সামরিক ভারসাম্য

  • ইসরাইল: উন্নত প্রযুক্তি, বিমান বাহিনী ও পারমাণবিক সক্ষমতায় অগ্রগামী।

  • তুরস্ক: ন্যাটোর অন্যতম বৃহৎ সেনাবাহিনী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে।

    • SİPER প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা: ১৫০ কিমি দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম।

    • দেশীয় পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান ‘খান’ ও স্টিলথ ড্রোন ‘কিজিল আলমা’ তৈরি হচ্ছে।

    • এরদোয়ান আসেলসানের জন্য ১.৫ বিলিয়ন ডলারের গবেষণা কেন্দ্র চালু করেছেন, যা রাডার, ইলেকট্রনিক যুদ্ধ ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করছে।

  • ইসরাইল এর আগে তুরস্ককে F-35 যুদ্ধবিমান বিক্রি বন্ধে ভূমিকা রেখেছে, যা তাদের উদ্বেগের প্রতিফলন।

সিরিয়া ফ্যাক্টর ও সাম্প্রতিক উত্তেজনা
সিরিয়ায় তুর্কি রাডার সরঞ্জামে ইসরাইলি হামলায় কয়েকজন তুর্কি সেনা নিহত হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় তুরস্ক স্থানীয় গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। আজারবাইজানের মধ্যস্থতায় এপ্রিলে একবার উত্তেজনা প্রশমিত হলেও তা ছিল কেবল সাময়িক।

অর্থনৈতিক সম্পর্কের দ্বন্দ্ব
যদিও দুই দেশের মধ্যে সামুদ্রিক বাণিজ্য অব্যাহত রয়েছে, তবু নেতানিয়াহু হামাসকে অজুহাত করে তুরস্কে হামলা চালাতে দ্বিধা করছেন না। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনকে তেলআবিব এর জন্য অতিরিক্ত উৎসাহ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

কাতারে হামলা শুধু একটি সামরিক অভিযান নয়, বরং ইসরাইলি আগ্রাসনের নতুন ধাপ। এটি তুরস্ককে সরাসরি লক্ষ্যবস্তুতে রূপান্তরিত করতে পারে। প্রযুক্তি ও পারমাণবিক সক্ষমতায় ইসরাইল এগিয়ে থাকলেও, তুরস্কের সামরিক শক্তি, ন্যাটো পরিচয় এবং ক্রমবর্ধমান প্রতিরক্ষা অবকাঠামো এই সম্ভাব্য সংঘর্ষকে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ভয়াবহ পরিণতির বার্তা দিচ্ছে।

Advertisement
Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531