
১৩ বছরের বেশি সময়েও সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাসহ চারটি আলোচিত হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে; তদন্ত কর্মকর্তা বদল হচ্ছে, তদন্তভার স্থানান্তর হচ্ছে—আর পরিবার-আশ্রিতরা দিনের পর দিন অপেক্ষায় থেকেhopelessness অনুভব করছে। তদন্তগ্রস্থ সংস্থাগুলো (থানা পুলিশ, ডিবি, র্যাব, পিবিআই) কাগজে–কাজে অগ্রগতি দেখালেও ফল মেলছে না; স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতার ডাক ওঠেছে।
প্রধান বিষয়গুলো — গুছিয়ে
১) সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা
-
ঘটেছে: ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজাবাজারের ফ্ল্যাট থেকে লাশ উদ্ধার।
-
বর্তমান অবস্থা: তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার দিন ১২০+ নয়—প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন ১২১ বার পিছিয়েছে। (সর্বশেষ ১৪ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন জমার দিন ছিল; পিবিআই জমা দিতে পারেনি; নতুন দিন ধার্য — ৩০ নভেম্বর)।
-
অনুসরণ: মামলা পাওয়ার পর থানা→ডিবি→র্যাব→পিবিআই পর্যায়ে তদন্ত; তদন্ত কর্মকর্তা বদলেছে ৮ বার।
-
ফরেনসিক: ছুরি, কাপড় ইত্যাদি বিদেশে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল; ডিএনএ রিপোর্ট এসেছে কিন্তু তা দিয়ে কার্যকর দৃষ্টান্ত মেলেনি; পিবিআই বলছে মিক্সড ডিএনএ পাওয়া গেছে। প্রায় ৭০ জনকে নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
-
পরিবার—দ্বন্দ্ব: সাগরের মা সালেহা মনিরের আক্ষেপ (উদ্ধৃতি): “বেঁচে থাকতে বিচার পাব—এমন আশা ছেড়ে দিয়েছি… এখন দেখছি, কোনো কিনারা হচ্ছে না।”
২) একরামুল হক (টেকনাফ কাউন্সিলর)
-
ঘটেছে: একরামুলকে ২০১৮ সালে র্যাবের ‘বন্দুকযুদ্ধ’-এ নিহত বলা হয়েছিল; বিবরণে সন্দেহ ও স্বজনদের অভিযোগ রয়েছে।
-
নতুন পদক্ষেপ: সাত বছর পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা মামলাটি নিয়ে কাজ শুরু করেছে; তদন্তের প্রক্রিয়ায় সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান (বাদি/নামের প্রতিলিপি অনুযায়ী) গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল ইচ্ছা করলে এটি গুম-ঘটনার সঙ্গে যুক্ত করে আলাদা বা অংশমূলকভাবে তদন্ত করতে পারে।
৩) তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী (নারায়ণগঞ্জ)
-
সময়কাল: প্রায় ১২ বছর ৬ মাস পার।
-
অবস্থা: অভিযোগপত্র এখনও দাখিল হয়নি; তদন্ত কর্মকর্তা বদলেছে ৬ বার; মামলাটি বর্তমানে র্যাব দেখভাল করছে।
-
গত প্রগতিঃ সরকার পরিবর্তনের পরে গ্রেপ্তার ও তদন্তে কিছু গতি এসেছে—গত বছর কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছেন; আদালতে আবার ৯ আসামি হাজিরা দেয়ার তথ্য পাওয়া গেছে; পলাতক ও অভিযুক্তর খোঁজ চলমান।
৪) সোহাগী জাহান তনু (কুমিল্লা)
-
সময়কাল: প্রায় ৯ বছর ছয় মাস (প্রায় সাড়ে ৯ বছর)।
-
অনুসন্ধান: দুটি ময়নাতদন্তেও মৃত্যুর কারণ অনির্দিষ্ট ছিল; পরবর্তী পরীক্ষায় তনুর পোশাক থেকে তিনজনের শুক্রাণু পাওয়া যায়—তবে এখনও প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত হয়নি। তদন্ত কর্মকর্তা বদলেছে ৬ বার; পিবিআইর এসআইঅ্যান্ডও বিভাগ এই মামলাটি দেখছে।
বিশ্লেষণ ও সমালোচনা (সংক্ষেপে):
-
টিআইবি-র নির্বাহী পরিচালক ও বিচারপন্থী বিশ্লেষকরা বলছেন—বিচারপ্রার্থীদের হতাশা বাড়ছে; দীর্ঘমেয়াদী মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে সিস্টেমে উদাহরণ স্থাপন করা সম্ভবই ছিল যদি যথাসময়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রাধান্য দেয়া হতো।
-
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিশিষ্টরা (পারদর্শী মন্তব্য) মনে করেন—অন্তর্বর্তী সময়ে প্রত্যাশা ও বাস্তবতার ফাঁক বড়; পূর্বের অবস্থা থেকে অনেক কিছুই অপরিবর্তিত রয়ে গেছে।
উপসংহার:
এগুলো কেবল ব্যক্তিগত ব্যক্তিদের কষ্টের কাহিনি নয়—দীর্ঘ প্রহর ও বারবার পিছিয়ে যাওয়া তদন্ত প্রতিবেদন ও বদলানো তদন্ত কর্মকর্তার তালিকা থেকে নাগরিকদের ন্যায়বিচারের প্রতি আস্থা ক্ষয় হচ্ছে। পরিবারগুলো দ্রুত, স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল তদর্থক তদন্তের দাবি জানাচ্ছে; সরকার ও তদন্ত সংস্থাগুলোকে জনগণের কাছে বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও নির্দিষ্ট সময়সীমা দিয়ে ফল দেখানোর তাগিদ রয়েছে।