
মাল্টা
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গত সোমবার দেশি মাল্টা কিনলেন গৃহিণী জেসমিন আক্তার। বিদেশি মাল্টার দাম বেশি হওয়ায় তিনি বিকল্প হিসেবে নিলেন দেশি মাল্টা—কেজিপ্রতি মাত্র ৮০ টাকায়। অথচ একই বাজারে বিদেশি মাল্টার দাম কেজিপ্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। কয়েক মাস আগেও এই দাম ছিল ৪০০–৪৫০ টাকা।
দেশি মাল্টা দেখতে গাঢ় সবুজ, স্বাদে বিদেশি মাল্টার কাছাকাছি হলেও রস তুলনামূলক কম। তবে দাম অনেক কম হওয়ায় মধ্যম আয়ের মানুষের কাছে দেশি মাল্টা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে।
দেশি মাল্টার ইতিহাস ও বিস্তার
কৃষিবিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, মাল্টা আসলে কমলাজাতীয় ফল। বিশ্বের প্রায় ৭০ শতাংশ কমলাই সবুজ রঙের। ১৯৯০-এর দশকে ভারত থেকে প্রথম সবুজ মাল্টা বাংলাদেশে আসে। কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরীক্ষামূলক চাষ শেষে এটি বারি মাল্টা–১ নামে স্বীকৃতি পায়।
এরপর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাইট্রাস প্রকল্প (২০০৫–১০) এবং ২০১৮ সালে বছরব্যাপী ফল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় দেশজুড়ে মাল্টা চাষের প্রসার ঘটে। এখন প্রায় সব জেলাতেই এর চাষ হচ্ছে।
উৎপাদন বৃদ্ধি
২০১৮–১৯ অর্থবছরে দেশে মাল্টার উৎপাদন ছিল ১৭ হাজার টন। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৪ হাজার টনে। একই সময়ে বাগানের আয়তন বেড়েছে ২,৪৩৩ হেক্টর থেকে প্রায় ৮ হাজার হেক্টরে।
উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে বান্দরবান, এরপর খাগড়াছড়ি ও রাজশাহী। পাহাড়ি এলাকায় চাষিরা পানির সংকট, কম দাম ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের মতো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন। যেমন, বান্দরবানের প্রেন্তে ম্রো জানান, তিনি ২০২১ সালে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করেন। এখন তাঁর বাগানে ২৫০টি চারা আছে। তবে ক্রেতাদের কাছ থেকে কেজিপ্রতি ৩০–৪০ টাকার বেশি পান না, ফলে লাভ কম হচ্ছে।
আমদানির চাপ ও শুল্ক
দেশে মাল্টার উৎপাদন বাড়লেও এখনো বিপুল পরিমাণ মাল্টা আমদানি করতে হয়। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে মাল্টা আমদানিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১,২০০ কোটি টাকা। আমদানি করা মাল্টার দামের চেয়ে বেশি অর্থ সরকার পাচ্ছে শুল্ক থেকে—প্রায় ১,৫৫৮ কোটি টাকা।
বর্তমানে এক কেজি মাল্টা আমদানিতে ১০৬ টাকা শুল্ক দিতে হয়। ফলে বিদেশি ফল সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
পুষ্টি ও ভোক্তা চাহিদা
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশের একজন মানুষ প্রতিদিন গড়ে ৯৫ দশমিক ৪ গ্রাম ফল খায়, যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ ১০০ গ্রাম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশি ফলের ওপর জোর দিলে মানুষের পুষ্টি চাহিদা সহজে পূরণ করা সম্ভব।
পুষ্টিবিদ খালেদা খাতুন বলেন, “দেশি ফল সস্তা, সহজলভ্য এবং পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। তাই দেশি মাল্টার মতো ফল ভোক্তাদের খাদ্যতালিকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”