
সচিবালয়
বাংলাদেশের সরকারি প্রশাসনে পদোন্নতির ধারাবাহিকতা এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে পদ ছাড়াই কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে প্রশাসনের ভেতরে ভারসাম্যহীনতা ও অচলাবস্থার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
পদোন্নতির চাপে পদসংকট
নিয়মিত উপসচিবের পদ রয়েছে প্রায় ১ হাজার। অথচ বর্তমানে উপসচিব পর্যায়ে কর্মকর্তার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৯৬ জনে। গত ২৮ আগস্ট নতুন করে আরও ২৬৮ জনকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার পর এই সংকট আরও গভীর হয়েছে। ফলে তাঁদের অনেককে ইনসিটু অবস্থায় রাখা হচ্ছে—মানে কাজ আগের মতোই, তবে বেতন ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ছে।
অতিরিক্ত সচিবের পদও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। সেখানে ৩৩৭টি নিয়মিত পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মকর্তা আছেন ৩৪৩ জন। যুগ্ম সচিব পদে রয়েছে ৫০২টি পদ, কিন্তু কর্মকর্তা রয়েছেন ১ হাজার ২৭ জন।
সুপারনিউমারারি পদের প্রথা
এ অবস্থায় সরকার “সুপারনিউমারারি পদ” সৃষ্টি করে পদোন্নতি দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি প্রশাসনে দক্ষতা বৃদ্ধির পরিবর্তে কেবল সংখ্যা বাড়াচ্ছে। বাস্তবে অনেক কর্মকর্তা নতুন পদবি পেলেও তাঁদের জন্য উপযুক্ত দায়িত্ব বা পদায়নের জায়গা খালি নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন,
“এতে প্রশাসনে এমন ধারণা জন্মাচ্ছে যে চাপ তৈরি করতে পারলেই পদোন্নতি পাওয়া সম্ভব।”
সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন বহু আগেই সার্ভিস একীভূতকরণ, এসইএস (সিনিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস) গঠন ও মেধাভিত্তিক পদোন্নতির সুপারিশ দিয়েছিল। কিন্তু এখনো সেই সংস্কার বাস্তবায়ন হয়নি। এর পরিবর্তে আগের সরকারের মতোই রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপের কারণে পদোন্নতি অব্যাহত রয়েছে।
বেতন কমিশন ও নতুন চ্যালেঞ্জ
সম্প্রতি নতুন বেতন কমিশন গঠিত হলেও সেখানে প্রশাসন কাঠামো সংস্কার বা ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ফলে প্রশাসনে “পদ ছাড়াই পদোন্নতি” এখন কার্যত মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা বণ্টনের হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সমালোচনা ও শঙ্কা
বিশেষজ্ঞদের মতে, এভাবে পদোন্নতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে কর্মকর্তাদের মধ্যে দক্ষতার চেয়ে মর্যাদার প্রতিযোগিতা বাড়বে। এতে প্রশাসনিক ভারসাম্য নষ্ট হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে জনসেবার মানও হুমকির মুখে পড়বে।
সার্বিকভাবে দেখা যাচ্ছে, পদ ছাড়া পদোন্নতি একদিকে কর্মকর্তাদের জন্য বাড়তি সুবিধা বয়ে আনছে, অন্যদিকে প্রশাসনকে টেনে নিচ্ছে এক অচলাবস্থার দিকে।