
কবির হোসেন পাটোয়ারী
রিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কবির হোসেন পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে প্রতারণা করে একে একে ১৭ নারীকে বিয়ের অভিযোগ ওঠার পর তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, তাঁকে রংপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
আজ বুধবার দুপুরে বরিশাল উপকূলীয় অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (উপ-বন সংরক্ষক) মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান মিঞাকে বরিশাল বিভাগের ভারপ্রাপ্ত ডিএফও হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ ও মানববন্ধন
কবির হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তিনি বিদেশে পড়াশোনা, সরকারি চাকরি, বিমানবালা হিসেবে নিয়োগ কিংবা সম্পত্তি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন জেলায় কর্মরত অবস্থায় একে একে ১৭ নারীকে বিয়ে করেন। আগের বিয়ের তথ্য গোপন রেখে ধারাবাহিকভাবে একাধিক বিয়ে করে তিনি প্রতারণা করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার নগরের কাশীপুর এলাকায় বিভাগীয় বন সংরক্ষকের কার্যালয়ের সামনে কয়েকজন নারী ও তাঁদের স্বজনেরা মানববন্ধন করেন। ঢাকার নাজনীন আক্তার, নারায়ণগঞ্জের সোনিয়া আক্তার, খুলনার নাসরিন আক্তারসহ অনেকেই নিজেদের ওই কর্মকর্তার স্ত্রী দাবি করে তাঁর বিচার দাবি করেন।
সর্বশেষ বিয়ে ও নির্যাতনের অভিযোগ
সূত্র জানায়, সর্বশেষ চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি খাদিজা আক্তারকে বিয়ে করেন কবির হোসেন। বিয়ের দ্বিতীয় দিনই শ্বশুরবাড়ির জমির অংশ লিখে দেওয়ার দাবি তোলেন তিনি। এতে রাজি না হওয়ায় খাদিজাকে বরিশালের সরকারি বাসভবন থেকে বের করে দেন।
খাদিজা অভিযোগ করেন, “আমাকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেছেন কবির হোসেন। পরে বাবার বাড়ির সম্পত্তি লিখে না দেওয়ায় আমাকে নির্যাতন করে বাসা থেকে বের করে দেন।”
আদালতে মামলা ও পিবিআই তদন্তের নির্দেশ
গতকাল মঙ্গলবার বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বন কর্মকর্তা কবির হোসেনের বিরুদ্ধে সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হাফিজ আহম্মেদ মামলা দায়ের করেন।
আদালতের বিচারক সাদিক আহম্মেদ আবেদনটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-কে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। মামলার পরবর্তী তারিখ আগামী ২০ নভেম্বর ধার্য করা হয়েছে।
বাদী পিপি হাফিজ আহম্মেদ বলেন, কবির হোসেন একে একে ১৭টি বিয়ে করেছেন। প্রতিটি বিয়েতে তিনি মুসলিম পারিবারিক আইন, ১৯৬১ সালের অধ্যাদেশের ৬ ধারার বিধান লঙ্ঘন করেছেন। প্রথম বিয়ে গোপন রেখে ধারাবাহিকভাবে একাধিক বিয়ে করে তিনি শুধু আইন নয়, ধর্মীয় মূল্যবোধ, সমাজব্যবস্থা ও সংস্কৃতির প্রতিও চরম চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন।