
হলান্ড
বেচারা ক্রিস্তিয়ান আভরাম বোধ হয় অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন—ম্যাচটা কবে শেষ হবে। কিন্তু সময় যেন থেমে গিয়েছিল অসলোর উলেভাল স্টেডিয়ামে। একের পর এক বল তাঁকে ফাঁকি দিয়ে জালে জড়াচ্ছিল, আর তিনি হতাশায় মাঠে বসে পড়ছিলেন। কখনো আবার জাল থেকে বল কুড়িয়ে আনছিলেন ভারাক্রান্ত মনে।
মঙ্গলবার রাতে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে গোলকিপার আভরামের মলদোভা বিধ্বস্ত হয়েছে নরওয়ের কাছে। স্কোরলাইন ১১–১! মলদোভার ফুটবল ইতিহাসে এটিই তাদের সবচেয়ে বড় পরাজয়। আর এই লজ্জার রাতের বড় ভুক্তভোগী ছিলেন ৩১ বছর বয়সী গোলরক্ষক আভরাম।
হলান্ডের ঝড়ে বিধ্বস্ত মলদোভা
নরওয়ের গোল উৎসবের নায়ক আর্লিং হলান্ড। ম্যানচেস্টার সিটির এই তারকা স্ট্রাইকার একাই করেছেন পাঁচ গোল। তাঁর এমন কীর্তিতে ভাগ বসানো নামটি আর একজন—লিওনেল মেসি। ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে এক ম্যাচে ৫ গোল করার অনন্য রেকর্ড এখন শুধু এই দুজনেরই দখলে।
হলান্ড ছাড়াও নরওয়ের অন্যরা গোল করেছেন ছয়বার। প্রতিপক্ষের ডিফেন্স ছিল নড়বড়ে, আভরাম দাঁড়িয়ে ছিলেন একেবারেই অসহায় হয়ে।
গোল বন্যার পর হলান্ডের ক্ষমা প্রার্থনা
আভরামের দুঃখটা মাঠেই বুঝেছিলেন হলান্ড। তাই খেলা শেষে সরাসরি তাঁর কাছে গিয়ে সান্ত্বনা দেন। শুধু তাই নয়, গোলকিপারের কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি।
ম্যাচ শেষে নরওয়ের টেলিভিশন চ্যানেল টিভি২ ডিরেক্টেকে আভরাম নিজেই বলেন,
‘হ্যালো, আমিই সেই গোলকিপার, যে ১১ গোল হজম করেছে।’—এভাবেই মজা করে পরিচয় দেন তিনি। এরপর যোগ করেন,
‘আর্লিংয়ের (হলান্ড) সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সে বলেছে, গোলগুলো খাওয়ায় আমার কোনো দোষ নেই। এমনকি সে ক্ষমাও চেয়েছে। সে আমাকে বুঝিয়ে বলেছে, গোলের ব্যবধান বাড়াতে সে খেলা থামায়নি, কারণ সেটা পরবর্তী সময়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। সে শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে চেয়েছে। এটা খেলারই অংশ।’
গোলকিপারের দৃঢ়তা
১১ গোল হজম করার যন্ত্রণা কতটা কষ্টকর, সেটি আভরাম স্বীকার করেছেন অকপটে। তাঁর ভাষায়,
‘কী আর বলব? মাঠে মরে যাইনি, এটুকুই সান্ত্বনা। আমাকে শক্ত থাকতে হবে। সামনে নতুন ম্যাচ আছে, তার আগে খুব বেশি সময় নেই। তবে হ্যাঁ, ১১ গোল অনেক বেশি হয়ে গেছে।’
বিশ্বকাপের পথে নরওয়ে
ইউরোপীয় অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ‘আই’ গ্রুপে নরওয়ে আছে ইতালি, ইসরায়েল, এস্তোনিয়া ও মলদোভার সঙ্গে। টানা পাঁচ ম্যাচে জয়ের পাশাপাশি বিশাল গোল পার্থক্যে এগিয়ে থেকে ২৮ বছর পর বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে হলান্ডের নরওয়ে।
অন্যদিকে মলদোভার জন্য রাতটা ছিল এক দুঃস্বপ্ন, আর গোলরক্ষক আভরামের জন্য এক অগ্নিপরীক্ষা। তবে সব হারিয়েও তাঁর কণ্ঠে শোনা গেল লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার।