
কিডনির রোগ
লুপাস, যার আরেক নাম সিস্টেমিক লুপাস ইরাইথ্রোমেটাসাস (SLE), একটি অটোইমিউন রোগ। এই রোগে শরীরের রোগ প্রতিরোধকারী ব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম) নিজেই শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে আক্রমণ করে বসে। ফলে দেখা দেয় ত্বকে র্যাশ, গিরায় ব্যথা কিংবা মুখে ঘা—এমনকি হতে পারে মারাত্মক অঙ্গ-প্রতঙ্গের জটিলতা, যার মধ্যে অন্যতম কিডনির সমস্যা বা লুপাস নেফ্রাইটিস।
কেন এটি ভয়ানক?
প্রায় ৫০ শতাংশ লুপাস রোগীর কিডনি আক্রান্ত হয়। তাঁদের ৩০ শতাংশের কিডনির কার্যকারিতা কমে যায় এবং ১০ শতাংশের ক্ষেত্রে কিডনি পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে যেতে পারে (End-Stage Renal Failure)। এটি ঘটে সাধারণত রোগ ধরা পড়ার প্রথম ৬ থেকে ৩৬ মাসের মধ্যেই, তবে পরে যেকোনো সময়ও হতে পারে।
লক্ষণগুলো যেগুলোতে সতর্ক হতে হবে:
-
চোখের নিচে বা চারপাশে ফোলা
-
পা ফোলা বা পায়ে পানি জমা
-
প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া বা প্রস্রাবের রং গাঢ় হওয়া
-
প্রস্রাবে ফেনা আসা
-
হঠাৎ করে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া
যদি এর সঙ্গে থাকে লুপাসের অন্যান্য সাধারণ লক্ষণ যেমন ত্বকের র্যাশ, ঠান্ডায় আঙুলের রঙ পরিবর্তন, মুখে ঘা—তবে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি।
নির্ণয় কীভাবে হয়?
সন্দেহ হলে কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন হয়:
-
প্রস্রাবে প্রোটিন, রক্তকণিকা ও সেলুলার কাস্ট আছে কি না দেখা হয়
-
সিরাম ক্রিয়েটিনিন দিয়ে কিডনির কার্যকারিতা বোঝা যায়
-
অ্যান্টি-dsDNA, কমপ্লিমেন্ট থ্রি ও ফোর (C3, C4) এর মাত্রা পরিমাপ করা হয়
-
কিডনি বায়োপসি—সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা, যা প্রদাহের ধরন ও তীব্রতা নির্ধারণ করে এবং চিকিৎসা নির্ভর করে এই রিপোর্টের উপর
চিকিৎসা কী?
লুপাস নেফ্রাইটিসের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি ও কিছুটা জটিল। সাধারণত:
-
স্টেরয়েড ও ইমিউনোসাপ্রেসিভ ওষুধ (যেমন মাইকোফেনোলেট মফেটিল, সাইক্লোফসফামাইড)
-
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ
-
প্রোটিন নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস এবং সঠিক জীবনযাপন পদ্ধতি
যথাযথ ও নিয়মিত চিকিৎসায় এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
পরামর্শ: যদি আপনি বা আপনার কাছের কেউ লুপাসে আক্রান্ত হন এবং উপরোক্ত উপসর্গগুলো দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে একজন বাতরোগ বিশেষজ্ঞ বা কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিন।