
আয়াতুল্লাহ রাশাদ
ইসলামী জীবনব্যবস্থায় নামাজ শুধু একটি আনুষ্ঠানিক ইবাদত নয়, বরং এটি মানুষের আত্মিক উন্নয়ন ও আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের একটি গভীর আধ্যাত্মিক অনুশীলন। সিজদার মাধ্যমে একজন মানুষ নিজের অহংকার, আত্মপরিচয় ও ব্যক্তিত্বের সমস্ত মোহ ছুড়ে ফেলে আল্লাহর সামনে নিজেকে একজন অনুগত বান্দা হিসেবে প্রকাশ করে। কোরআনে বলা হয়েছে, "তুমি সিজদা করো এবং সান্নিধ্য অর্জন করো" (সূরা আলাক, আয়াত ১৯)—এই আয়াত নামাজে সিজদার মাধ্যমে আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার পথ নির্দেশ করে।
সম্প্রতি ইমাম রেজা (আ.) ধর্ম শিক্ষাকেন্দ্রে আয়োজিত এক সেমিনারে "প্রকৃত নামাজ আদায়কারীদের নামাজের আদব ও বৈশিষ্ট্য" শীর্ষক আলোচনা করেন প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ আয়াতুল্লাহ রাশাদ। সেখানে তিনি নামাজের বিস্ময়কর রহস্য ও মুসলিম সমাজে এর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন।
তিনি বলেন, ইসলামে নামাজের যে উচ্চ মর্যাদা রয়েছে, তা শুধু আনুষ্ঠানিক ইবাদত নয়, বরং এটি এক গভীর চিন্তার খোরাক, এক আধ্যাত্মিক উন্নয়নের মাধ্যম। সূরা আল-বাকারার ৪৫ নম্বর আয়াত উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো”—এই আয়াত নামাজের মাধ্যমে ধৈর্য ও আত্মশুদ্ধির পথ দেখায়।
আয়াতুল্লাহ রাশাদ জানান, যাঁরা বিনয়ের সাথে নামাজে দাঁড়ান, তাঁদের জন্য এই ইবাদত মধুর হয়ে ওঠে। তিনি আহলে বাইতের ইমামদের নামাজে গভীর নিমগ্নতার উদাহরণ তুলে ধরেন। বিশেষ করে আমিরুল মু'মিনীন আলী (আ.)-এর নামাজে এমন মনোসংযোগের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে তাঁর পা থেকে তীর বের করাও তিনি অনুভব করতেন না।
তাসু'আর রাতে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর ঐতিহাসিক উক্তি “নিশ্চয়ই, আমি নামাজকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি” উল্লেখ করে আয়াতুল্লাহ রাশাদ বলেন, এই ভালোবাসা শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং এটি এক ঐশী দায়িত্ব, যা আহলে বাইতের জীবনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।
সেমিনারে তিনি নামাজকে "আধ্যাত্মিক বিকাশের সীমাহীন সমুদ্র" হিসেবে আখ্যা দেন এবং বলেন, কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী নামাজ শুধু সংখ্যার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি মানুষের আত্মার গভীরে বিস্ময়কর প্রভাব ফেলে।
এই আলোচনা সমাজ ও যুবসমাজের মাঝে নামাজের গুরুত্ব ও এর গভীর তাৎপর্য নতুনভাবে উপলব্ধি করার পথ তৈরি করেছে।