
রক্ত
জন্মগত রক্তরোগ থ্যালাসেমিয়া আমাদের দেশের একটি নীরব সংকট। রোগটি দুই ধরনের—রক্ত পরিসঞ্চালন–নির্ভর ও রক্ত পরিসঞ্চালন–অনার্ভর। প্রথম ধরনের রোগীদের আজীবন প্রতি মাসে রক্ত নিতে হয়। এই নিয়মিত রক্ত গ্রহণ শুধু কষ্টকরই নয়, এটি একাধিক জটিলতার জন্ম দিতে পারে।
⚠️ কেন এটি ভয়াবহ?
থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তদের শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে গড়বড় হয়, ফলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। দীর্ঘমেয়াদে রক্ত গ্রহণ করতে থাকলে দেখা দেয়—
-
আয়রন জমে যাওয়া (Iron overload)
-
হৃদযন্ত্র ও যকৃতে সমস্যা
-
হরমোন সমস্যা ও শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া
-
রোগপ্রতিরোধে জটিলতা (alloimmunization)
তাই চিকিৎসা না করে শুধুমাত্র রক্ত দেওয়ার পদ্ধতি একপ্রকার ‘ডাবল ব্লেডেড সোর্ড’-এর মতো।
?️ প্রতিরোধই সবচেয়ে কার্যকর:
থ্যালাসেমিয়া এমন একটি রোগ, যাকে নিয়ন্ত্রণ করা যত কঠিন, প্রতিরোধ করা ততটাই সহজ— যদি সচেতনতা থাকে।
? বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
? যদি দুইজনই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন, বিয়ে না করাই উত্তম।
? বাহক দম্পতির ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় প্রিন্যাটাল স্ক্রিনিং করিয়ে সন্তানের ঝুঁকি নির্ধারণ করা যায়।
? ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ামুক্ত ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করাও সম্ভব।
? চিকিৎসায় আশার আলো:
❖ বর্তমানে থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসায় ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে।
❖ দক্ষ রক্তরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে আধুনিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে রক্ত পরিসঞ্চালনের প্রয়োজন হ্রাস পায়।
❖ চিকিৎসার মাধ্যমে হিমোগ্লোবিন চেইনের ভারসাম্যহীনতা রোধ করে রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
? রোগমুক্তির পথ:
১️⃣ জিন থেরাপি: যদিও বাংলাদেশে এখনো চালু হয়নি, তবে এটি ভবিষ্যতের অন্যতম আশাব্যঞ্জক পথ।
২️⃣ অ্যালোজেনিক স্টেমসেল ট্রান্সপ্লান্ট:
-
এই পদ্ধতিতে রোগীর অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করে রোগ থেকে পুরোপুরি মুক্তি সম্ভব।
-
ঢাকা মেডিকেল কলেজ-এ ইতোমধ্যে সফল ট্রান্সপ্লান্ট হয়েছে অত্যন্ত কম খরচে।
থ্যালাসেমিয়া কোনো দুরারোগ্য ব্যাধি নয়, বরং এটি সচেতনতা ও আধুনিক চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণযোগ্য ও নিরাময়যোগ্য রোগ। অপ্রয়োজনীয় রক্ত গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন, এবং একজন রক্তরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
এ রোগে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ অধিক কার্যকর এবং অর্থবহ—এটাই থ্যালাসেমিয়া দিবসের বার্তা।