
স্ক্যাবিস
বাংলাদেশের কুমিল্লা ও রাজশাহীতে ছোঁয়াচে চর্মরোগ স্ক্যাবিস-এর প্রাদুর্ভাব ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে। সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল সেন্টারগুলোতে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে সংক্রমণের হার উদ্বেগজনক। চিকিৎসকরা বলছেন, সচেতনতা ও দ্রুত চিকিৎসা না নিলে এ রোগ থেকে কিডনি জটিলতাসহ দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে।
কী হচ্ছে কুমিল্লা ও রাজশাহীতে?
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ২০০–২৫০ জন স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, প্রতিদিন শিশু রোগীর মধ্যে প্রায় ৪০–৫০ শতাংশ স্ক্যাবিসে আক্রান্ত।
এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রতিদিন ৩০–৩৫ জন স্ক্যাবিস আক্রান্ত রোগী আসছেন চিকিৎসা নিতে। শহরের প্রাইভেট চেম্বারগুলোতেও একই চিত্র।
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মাশিউল আলম হোসেন জানান, "এটা শুধু একটি অঞ্চলের সমস্যা নয়, বরং সারাদেশেই স্ক্যাবিসের প্রাদুর্ভাব রয়েছে।"
স্ক্যাবিস কী?
স্ক্যাবিস একটি প্যারাসাইটিক চর্মরোগ যা সারকোপটিস স্ক্যাবিয়া নামের পরজীবীর কারণে হয়। এই পরজীবী মানবদেহের চামড়ার উপরিভাগে চলাচল করে, ডিম পাড়ে এবং বংশ বিস্তার করে। এটি খুব দ্রুত সংক্রামক এবং একজন আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ, জামা-কাপড়, বিছানা বা তোয়ালের মাধ্যমে অন্যদের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
লক্ষণ ও উপসর্গ
-
তীব্র চুলকানি (বিশেষ করে রাতে বেশি হয়)
-
আঙুলের ফাঁক, কবজি, নাভি, কনুই, যৌনাঙ্গ, ঘাড়, কোমর, নিতম্ব ও বগলের নিচে ছোট লাল ফুসকুড়ি
-
ফুসকুড়ি থেকে তরল বের হওয়া
-
চুলকানির কারণে চামড়ায় ক্ষত, যা থেকে সেকেন্ডারি ইনফেকশন হতে পারে
শিশুদের ক্ষেত্রে: অনেক সময় স্ক্যাবিস ছাড়াও সঙ্গে জ্বর, ঠান্ডা, নিউমোনিয়া বা ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা যায়।
স্ক্যাবিস কীভাবে ছড়ায়?
-
আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের সংস্পর্শে এলে
-
আক্রান্তের ব্যবহৃত জামা-কাপড়, বিছানা, গামছা, তোয়ালে ব্যবহার করলে
-
অপরিচ্ছন্ন ও ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে একাধিক ব্যক্তির অবস্থান
চিকিৎসা কী?
চিকিৎসকরা বলেন, স্ক্যাবিসের দুই ধরনের চিকিৎসা রয়েছে:
১. প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা
২. প্রতিকারমূলক চিকিৎসা
প্রতিরোধমূলক পরামর্শ:
-
সবার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা
-
আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা রাখা
-
ব্যবহার্য কাপড়, বিছানা, গামছা গরম পানিতে ধুয়ে রোদে শুকানো ও প্রয়োজনে আয়রন করা
-
ঘরবাড়ি নিয়মিত পরিষ্কার রাখা
প্রতিকারমূলক চিকিৎসা:
-
গলা থেকে পা পর্যন্ত ওষুধি লোশন বা ক্রিম লাগানো
-
৮–১২ ঘণ্টা পর সাবান দিয়ে গোসল
-
৭ দিন পর্যন্ত এভাবে চিকিৎসা চালানো
-
মুখে খাওয়ার ওষুধ গ্রহণ
-
চিকিৎসকের পরামর্শমাফিক পরিবারের সব সদস্যের একসাথে চিকিৎসা নেওয়া
ঝুঁকি কী?
সঠিকভাবে চিকিৎসা না হলে স্ক্যাবিস থেকে সেকেন্ডারি ইনফেকশন হতে পারে, যা সময়মতো চিকিৎসা না করলে কিডনির ক্ষতি পর্যন্ত হতে পারে।
চিকিৎসক হোসেন বলেন, "এই রোগে আক্রান্ত হয়ে যদি কেউ চিকিৎসা না নেয়, তবে ধীরে ধীরে কিডনির উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই রোগ নির্ণয় হতেই সতর্ক হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।"
কীভাবে প্রতিরোধ করবেন?
-
দৈনন্দিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
-
নিয়মিত গোসল ও কাপড় ধোয়া
-
কারো শরীরে চুলকানির লক্ষণ দেখলে সর্তক হওয়া
-
আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা
-
চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া
স্ক্যাবিস একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ হলেও সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসা না নিলে এটি পরিবার ও সমাজে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে ব্যক্তি ও পরিবারকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। তাই এ রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলেই দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।