
সাপের দুধ পান
প্রবাদ আছে ‘দুধ দিয়ে কালসাপ পোষা’। কিন্তু সাপ কী আসলে দুধ পান করতে পারে? আবার বাংলা সিনেমায় অনেক সময়ই দেখা যায় সাপ দুধের পেয়ালা থেকে দুধপান করছে। গরুর খামারিরাও মাঝেমধ্যে দাবি করেন, সাপ এসে গরুর দুধ খেয়ে গেছে। কিন্তু আদতেই কি সাপ দুধ পান করতে পারে? বিজ্ঞান কী বলে?
পৃথিবীজুড়ে প্রায় চার হাজার প্রজাতির সাপ রয়েছে। তবে এসব সাপের শতভাগই মাংসাশী। এরা আবার কখনোই উদ্ভিদজাতীয় কিছু খায় না। আজ পর্যন্ত বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা এমন প্রজাতির সাপ খুঁজে পায়নি, যা অল্প পরিমাণে হলেও উদ্ভিদজাতীয় কিছু খায়। সাপ খাবারের জন্য জীবন্ত প্রাণী বেছে নেয়। কখনো পাখি, মাছ এমনকি সাপসহ সরীসৃপ প্রজাতির ডিমও খেয়ে থাকে। সাপের খাদ্যতালিকায় আছে ইঁদুর ও ইঁদুরজাতীয় অন্যান্য প্রাণী, খরগোশ, পাখি, ব্যাঙ, মাছ, বিভিন্ন অমেরুদণ্ডী প্রাণী যেমন কেঁচো, অন্যান্য প্রজাতির সাপ ইত্যাদি। তবে সাপ দুধ বা দুধজাতীয় খাবার খায় এমন কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আর সাপের দৈহিক বৈশিষ্ট্যও দুধ বা দুধজাতীয় খাবার গ্রহণ সমর্থন করে না। কারণ, দুধ হজমের জন্য প্রাণীর ক্ষুদ্রান্ত্রে ‘ল্যাকটজ’ নামের এনজাইম বা জারক রস থাকা আবশ্যক। ল্যাকটোজ বা দুধজাতীয় খাবারকে হজমে সাহায্য করে এই ল্যাকটেজ। কিন্তু সাপের পরিপাক প্রক্রিয়ার ল্যাকটেজের কোনো উপস্থিতি পাননি প্রাণিবিজ্ঞানীরা। ফলে কোনো প্রজাতির সাপেরই ল্যাকটোজ বা দুধ ও দুধজাতীয় খাবার গ্রহণের কোনো বাস্তবতা নেই।
ইতালিয়ান গবেষক ডেভিড ইরমাকোরা ২০১৭ সালে এক গবেষণায় জানান, সাপের ল্যাকটেজ এনজাইম না থাকায় তার পরিপাক প্রক্রিয়ায় ল্যাকটোজ জাতীয় খাদ্য হজম হয় না। তাই সাপের পক্ষে দুধ হজম করা সম্ভব নয়।
এছাড়া সাপের কাটা বিভক্ত জিহবা তরল গ্রহণ করা সহজ নয়। তবে সাপ যে পানি পান করে, তা চোয়ালের নিচের অংশের মাধ্যমে করে। সাপের মুখের নিচের অংশে অনেকগুলো ছোট খাঁজ থাকে, যা স্পঞ্জের মতো পানিশোষণ করে। আর সাপ এভাবেই পানি পান করে।
তাহলে সাপ দুধ পান করে এ ধারণা আসলো কোথা থেকে। মানুষের কল্পনায় নানারূপে নানাভাবে সাপ জায়গা করে নিয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতিতে নানা প্রতীক নিয়ে হাজির হয়েছে, যেমন কোনো কোনো সংস্কৃতিতে সাপ ভয়ের, কোনো ক্ষেত্রে আবার সম্মানের পাত্র।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক সুস্মিতা চক্রবর্তী বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘সাপ নিয়ে একই সাথে ভয় এবং কৌতূহল থাকার কারণেই সাপকেন্দ্রিক নানা ধরনের রীতি-রেওয়াজ, কিংবদন্তি প্রচলিত রয়েছে। সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়গুলোই তো সাহিত্য-সংস্কৃতিতে ফুটে ওঠে। সেভাবে জনজীবনের সঙ্গে সাপের সম্পৃক্ততার কারণেই সাপ নিয়ে এত গল্প, কাহিনি রয়েছে।’
ধারণা করা যায়, কুসংস্কার থেকেই সাপের দুধ খাওয়ার প্রচলিত মতটির জন্ম। তবে ১৯৮১ সালে ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের অ্যানিমেল ডাইভার্সিটি ওয়েবের এক প্রতিবেদনে মিল্কস্নেক (বৈজ্ঞানিক নাম: ল্যামপ্রোপেল্টিস ট্রায়াঙ্গুলাম) প্রজাতির সাপের দুধ পান করা নিয়ে মিথ বা জনশ্রুতির খোঁজ মিলেছে ।
আমাদের দেশে দুধরাজ নামে সাপের খোঁজ পাওয়া যায়। তবে নামে দুধরাজ হলেও এই সাপ দুধ খায় এমন কোনো প্রমাণ নেই। এ ছাড়া সাপের যেসব বৈশিষ্ট্য স্বীকৃত, তার মধ্যে সাপের দুধ পানের সক্ষমতা নেই।