
আমিনুল ইসলাম
আমিনুল ইসলামের নতুন পরিচালনা পর্ষদের সামনে এবার বড় চ্যালেঞ্জ বিপিএল। ডিসেম্বর–জানুয়ারিতে টুর্নামেন্ট আয়োজন নিয়ে তোড়জোড়ও শুরু হয়ে গেছে। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান আইএমজির সঙ্গে দ্রুতই চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে জানিয়েছে বিপিএলের নতুন গভর্নিং কাউন্সিল। এরপর শুরু হবে ফ্র্যাঞ্চাইজি বাছাই, প্লেয়ারস ড্রাফটসহ অন্যান্য কার্যক্রম।
ডিসেম্বরে বিপিএল শুরু করা মানে হাতে মাত্র দুই মাসের মতো সময়। একই রকম সময় নিয়ে বিপিএলের গত আসরও আয়োজন করতে হয়েছিল বিসিবিকে। কিন্তু তাড়াহুড়া করে সবকিছু করতে গিয়ে বিপিএল নিয়ে বেশ ঝামেলাই পোহাতে হয়েছিল ফারুক আহমেদের বোর্ডকে। পরে তো খেলোয়াড়দের পাওনা বকেয়া আর স্পট ফিক্সিং বিতর্কে টালমাটাল হয়ে ওঠে টুর্নামেন্টটাই। অভিযোগ ওঠে ফ্র্যাঞ্চাইজি দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম না মানারও।
ফারুক আহমেদের মতো এবারও বিসিবি সভাপতি নির্বাচিত হয়ে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের প্রধান হয়েছেন আমিনুল, সদস্যসচিব হিসেবে আছেন বিসিবি পরিচালক ইফতেখার রহমান। তাঁদেরও অল্প সময়ের মধ্যেই টুর্নামেন্ট আয়োজনের পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। বিপিএল নিয়ে এবারও তাই জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা থাকছে।
তবে গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্যসচিব ইফতেখার রহমানের বিশ্বাস, এবার অন্তত গত আসরের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হবে না বোর্ডকে, ‘গত বছর ফারুক ভাই হয়তো ভালোভাবে সামলে নিতে পারেননি। উনি যদি ফ্র্যাঞ্চাইজি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতেন, তাহলে এমন হতো না। অনেকের ব্যাংক গ্যারান্টি ছিল না। সেসব ভুল থেকে আমরা শিখব। এবারের আসরে তা করব না।’
তবে বাস্তবতা হলো এবারও ভালো ফ্র্যাঞ্চাইজি খুঁজে পাওয়াটাই বড় চ্যালেঞ্জ বিসিবির সামনে। এখন পর্যন্ত রংপুর রাইডার্স ছাড়া কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজই চূড়ান্ত নয়। বিপিএলের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশাল বর্তমান বোর্ডের অধীনে বিপিএল খেলতে অনাগ্রহের কথা জানিয়েছে। দলটিকে দুবার শিরোপা জেতানো অধিনায়ক তামিম ইকবাল তো পরশু এই বোর্ডের অধীনে সব ধরনের ক্রিকেট বর্জনের আহ্বান জানানো সংবাদ সম্মেলনেও উপস্থিত ছিলেন।
সম্ভাব্য সংকট বুঝতে পেরে ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য আগ্রহী প্রতিষ্ঠান চেয়ে আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আগে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছে গভর্নিং কাউন্সিল। বিসিবির নবনির্বাচিত এক পরিচালকের প্রতিষ্ঠানও বিপিএলে দল নিতে আগ্রহী বলে শোনা যাচ্ছে।
জানা গেছে, সময় যেহেতু কম, ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে বিতর্ক এড়াতে শেষ পর্যন্ত পাঁচটি, এমনকি চারটি ফ্র্যাঞ্চাইজি দল নিয়েও বিপিএল আয়োজন করতে পারে বিসিবি। ফ্র্যাঞ্চাইজি দেওয়ার ক্ষেত্রে নির্ধারিত মানদণ্ড অনসরণে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছেন গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্যসচিব, ‘কোম্পানি প্রোফাইল, অডিট রিপোর্ট, ব্যাংক সলভেন্সি, সর্বশেষ ভ্যাট ও ট্রেড লাইসেন্স—এই সব বিষয়ই দেখব আমরা। শুধু ভালো কোম্পানি হলে হবে না, ম্যানেজমেন্টও ভালো হতে হবে।’
তবে বিপিএলের গত আসরে ওঠা ফিক্সিংয়ের অভিযোগ নিয়ে তিন সদস্যের স্বাধীন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও সুপারিশ কতটা মানা হবে, সে প্রশ্ন থাকছেই। এ মাসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা তাদের, যাতে সন্দেহভাজন ঘটনা, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে আরও বিস্তারিত তথ্য থাকার কথা।
তবে কমিটি প্রাথমিক প্রতিবেদনেই নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার আগপর্যন্ত সব মিলিয়ে ১৮–২০ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বিপিএল থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দিয়েছে বোর্ডকে। ২৬ আগস্ট প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর বিসিবি সভাপতি আমিনুল বলেছিলেন, তদন্ত প্রতিবেদনকে ‘বাইবেল’ ধরে নিয়ে এগোবেন তাঁরা। ‘আমরা এটাকে আমাদের “প্লে-বুক” হিসেবে ব্যবহার করব’—বলেছিলেন বিসিবি সভাপতি।
কিন্তু এরপর এ নিয়ে দৃশ্যমান আর কোনো অগ্রগতি নেই। ১ সেপ্টেম্বর সিলেটে অনুষ্ঠিত এক বোর্ড সভার পর বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের তখনকার সদস্যসচিব নাজমূল আবেদীন জানিয়েছিলেন, পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্য কারা, সেটি অবশ্য অজানাই ছিল, গতকাল তো বর্তমান সদস্যসচিব এবং আগের বোর্ডেও পরিচালক পদে থাকা ইফতেখার রহমানের কথা শুনে মনে হলো, এ রকম কোনো কমিটি আসলে হয়ইনি!
ইফতেখার জানিয়েছেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্টটি বিসিবির দুর্নীতিবিরোধী পরামর্শক অ্যালেক্স মার্শালের কাছে দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো নতুন করে খতিয়ে দেখবেন তিনি। এবারের বিপিএলকে ফিক্সিং–বিতর্কের বাইরে রাখতে তাঁর দেখানো পথেই হাঁটবে বিসিবি।