ঢাকা,  সোমবার
১৬ জুন ২০২৫

Advertisement
Advertisement

রাতের আঁধারে হামলা: ইরান-ইসরায়েল ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধের পেছনের গোপন কৌশল

প্রকাশিত: ১৩:০৭, ১৬ জুন ২০২৫

রাতের আঁধারে হামলা: ইরান-ইসরায়েল ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধের পেছনের গোপন কৌশল

তেল আবিব

রাত গভীর হলেই যখন হঠাৎ সাইরেনের শব্দে আকাশ ফাটে এবং ইরান বা ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধেয়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে তৎপর হয়, তখন বোঝা যায়—এটি নিছক কোনো তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নয়। বরং এটি এক সুপরিকল্পিত সামরিক কৌশলের অংশ। ইরান বা ইসরায়েল থেকে যেসব ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়, তার অধিকাংশই রাতের বেলায়। এটি কোনো কাকতালীয় বিষয় নয়। বরং গোপনীয়তা রক্ষা, চমক সৃষ্টি এবং মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব বিস্তার—এই তিনটি মূল লক্ষ্য সামনে রেখেই পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের হামলা চালানো হয়।

প্রযুক্তির সীমা, কৌশলের গভীরতা

রাতের আঁধার স্বাভাবিকভাবে দৃশ্যমানতা কমিয়ে দেয়। ফলে স্যাটেলাইট কিংবা নজরদারি বিমানের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়া শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। এই প্রযুক্তিগত সুবিধাটিকে কাজে লাগিয়ে ইরান প্রায়শই রাতে ক্ষেপণাস্ত্রের জ্বালানি ভরার কাজ সম্পন্ন করে। বিশেষ করে তরল জ্বালানি চালিত ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর ক্ষেত্রে এই কৌশল গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

ক্ষেপণাস্ত্র ইঞ্জিনের মৌলিক বাস্তবতা

ক্ষেপণাস্ত্র জ্বালানোর জন্য শুধু জ্বালানিই যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন হয় অক্সিডাইজার নামক উপাদান, যা দহন প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ করে। যেহেতু ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মহাকাশসীমার কাছাকাছি উচ্চতায় ওঠে, যেখানে অক্সিজেন থাকে না বললেই চলে—তাই ক্ষেপণাস্ত্রকে জ্বালানি ও অক্সিডাইজার উভয়ই বহন করতে হয়। এই প্রযুক্তিগত বাস্তবতা ক্ষেপণাস্ত্র ডিজাইনের একটি মৌলিক নির্ধারক।

দুই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র, দুই ধরনের কৌশল

ইরানের শাহাব সিরিজের মতো দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তরল জ্বালানি চালিত, যেগুলোর জ্বালানি ভরার সময় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এই সময়েই সেগুলো শত্রুর নজরে পড়তে পারে। ফলে রাতকে বেছে নেওয়া হয় কম দৃশ্যমানতার আবরণ হিসেবে।

অন্যদিকে, ফাতেহ-১১০ বা জুলফিকারের মতো স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কঠিন জ্বালানি চালিত। এগুলো ‘ফায়ার অ্যান্ড ফরগেট’ প্রক্রিয়ায় কাজ করে—যার অর্থ, একবার নিক্ষেপ করলে আর নিয়ন্ত্রণের সুযোগ থাকে না। তবে মোবাইল লঞ্চার থেকে দ্রুত উৎক্ষেপণযোগ্য হওয়ায় এসব ক্ষেপণাস্ত্র দ্রুত ও আকস্মিক হামলার জন্য কার্যকর।

যুদ্ধের মনস্তাত্ত্বিক দিক

রাতের বেলায় হামলার একটি বড় উদ্দেশ্য হলো—শত্রুর মনে ভয় ও অনিশ্চয়তা তৈরি করা। রাত যখন নিরাপত্তার প্রতীক হওয়ার কথা, তখন হঠাৎ হামলা হলে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এটি শত্রুর মনোবল দুর্বল করার একটি কার্যকর হাতিয়ার।

প্রতিরক্ষা নয়, কৌশলের দৃষ্টিভঙ্গি

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময় নির্বাচন—বিশেষ করে রাতের বেলায়—এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে তারা শুধু প্রতিরক্ষা নয়, বরং চমক ও টিকে থাকার কৌশলে বিশ্বাস করে। প্রযুক্তি, কৌশল এবং মনস্তত্ত্বের একত্র প্রয়োগের ফলে তারা একটি বহুমাত্রিক হামলা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, যেখানে সময় নির্বাচনও একটি শক্তিশালী অস্ত্র।

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধ একবিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তি নির্ভর যুদ্ধনীতির প্রতিচ্ছবি। যেখানে আক্রমণ মানেই শুধু ধ্বংস নয়, বরং এর পেছনে থাকে সময়, স্থান ও মনস্তত্ত্ব নিয়ন্ত্রণের সুপরিকল্পিত কৌশল। রাতের নীরবতা তাই শুধু অন্ধকার নয়—এটি এক ধরনের যুদ্ধক্ষেত্রও বটে।

Advertisement
Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531