
পেন্টাগন
মধ্যপ্রাচ্যকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ভূরাজনৈতিক অবস্থানের সমালোচনা করায় অপসারণ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এক ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া একাধিক পোস্টে ইসরায়েলের নীতিমালা ও নেতাদের তীব্র সমালোচনা করার জেরে মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন এ সিদ্ধান্ত নেয়।
? কে এই নাথান ম্যাক্করম্যাক?
অপসারিত এই কর্মকর্তা কর্নেল নাথান ম্যাক্করম্যাক, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের জে-৫ স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং ডিরেক্টরেটের লেভান্ত (ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চল) ও মিসর শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ পদে থেকে তিনি সরাসরি মধ্যপ্রাচ্য সংক্রান্ত কৌশল প্রণয়নে যুক্ত ছিলেন।
? বিতর্কিত পোস্ট ও প্রতিক্রিয়া
এক্স (সাবেক টুইটার)–এ ম্যাক্করম্যাক নামের সঙ্গে আংশিক মিল রয়েছে এমন একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ধারাবাহিকভাবে বিতর্কিত পোস্ট দেওয়া হচ্ছিল। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে জিউইশ নিউজ সিন্ডিকেট (JNS)–এর প্রতিবেদনের মাধ্যমে।
পোস্টে কী বলা হয়েছিল?
-
ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের "সবচেয়ে নিকৃষ্ট মিত্র" বলা হয়
-
নেতানিয়াহুকে ও তাঁর মিত্রদের "ইহুদি-শ্রেষ্ঠত্ববাদী" বলা হয়
-
অভিযোগ তোলা হয়, তাঁরা "ফিলিস্তিনিদের জাতিগত নির্মূল ও বিতাড়নের" নীতিতে বিশ্বাসী
-
ওয়াশিংটনকে দায়ী করা হয় ইসরায়েলের "খারাপ আচরণে মদদ" দেওয়ার জন্য
-
দাবি করা হয়, "হলোকাস্ট-পরবর্তী অপরাধবোধ" থেকেই পশ্চিমা বিশ্ব ইসরায়েলের সমালোচনায় পিছিয়ে থাকে
-
ইসরায়েলের কার্যকলাপকে "জাতিগত নির্মূল ও গণহত্যার উৎস" হিসেবে উল্লেখ করা হয়
-
২০২3 সালের জুনের পর থেকে ইসরায়েলকে "খুনোখুনি-প্রিয় গোষ্ঠী" হিসেবে অভিহিত করে আসছিলেন তিনি
?️ পেন্টাগনের পদক্ষেপ ও তদন্ত
জেএনএস ও মিডল ইস্ট আইয়ের প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই ম্যাক্করম্যাককে তার পদ থেকে অপসারণ করা হয়।
পেন্টাগনের একজন মুখপাত্র জানান:
“বিষয়টি তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় কর্নেল ম্যাক্করম্যাক জয়েন্ট স্টাফে দায়িত্ব পালন করবেন না।”
এ বিষয়ে আভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছে প্রতিরক্ষা দপ্তর। একজন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগের মাধ্যমে পোস্টগুলোর সত্যতা ও এর পেছনে তাঁর সংশ্লিষ্টতা যাচাই করা হবে।
? ভূরাজনৈতিক তাৎপর্য
এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নীতি ও মধ্যপ্রাচ্যে তার অবস্থান নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
-
সামরিক কর্মকর্তাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কতটা?
-
যুক্তরাষ্ট্রের ‘নিষ্কলুষ মিত্র’ হিসেবে ইসরায়েলের ভূমিকা কি প্রশ্নাতীত?
-
ভিন্নমত পোষণ করলেই কি তা দমনযোগ্য অপরাধ?
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও কূটনৈতিক অভ্যন্তরীণ মতানৈক্য দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে।
কর্নেল ম্যাক্করম্যাক ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের নীতিকে প্রকাশ্যে যেভাবে তুলোধোনা করেছেন, তা যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নজিরবিহীন। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চললেও একথা অস্বীকার করা যাবে না যে, এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যসংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের নীতিকে ঘিরে বিতর্ক ও বিভাজনকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।
এই বহুল আলোচিত ঘটনাটি হয়তো ভবিষ্যতের সামরিক কূটনীতি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে আরও অনেক আলোচনা ও মূল্যায়নের জন্ম দেবে।