
আসিম মুনির
ভারতের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সংঘাতে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল পদে পদোন্নতি দিয়েছে দেশটির সরকার। এরপর থেকেই নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছেন তিনি। বিশেষ করে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো তার অতীত জীবনের নানা দিক প্রকাশ করতে শুরু করেছে।
সাধারণ পরিবারের সন্তান থেকে সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পদে
সংবাদমাধ্যম মানি কন্ট্রোল–এর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, পাকিস্তানের আগের সেনাপ্রধানদের বেশিরভাগই উচ্চবিত্ত সামরিক বা আমলা পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। কিন্তু আসিম মুনিরের বেড়ে ওঠা হয়েছে সাধারণ পরিবেশে। তাঁর বাবা ছিলেন স্কুলশিক্ষক এবং মসজিদের ইমাম। ১৯৪৭ সালে ভারতের পাঞ্জাবের জালান্দার থেকে পাকিস্তানে চলে আসেন তাঁর পরিবার।
রাওয়ালপিন্ডির একটি মাদরাসা মারকাজ দারুল তাওহিদ থেকে শিক্ষা জীবন শুরু করেন আসিম মুনির। ধর্মীয় আবহে বেড়ে উঠলেও তিনি ভর্তি হন পাকিস্তান মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে এবং অ্যাবটাবাদ ক্যাম্পাস থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্টে কমিশন পান।
পরে পাক সেনাবাহিনী তাঁকে সৌদি আরবে পাঠায়, যেখানে তিনি হাফেজে কোরআন হন। উর্দু, ইংরেজির পাশাপাশি আরবিতেও সাবলীল তিনি। এ পর্যন্ত তিনিই একমাত্র পাকিস্তানি সেনাপ্রধান যিনি মাদ্রাসা থেকে শিক্ষাজীবন শুরু করে ফিল্ড মার্শাল পর্যন্ত উঠেছেন।
উত্থান ও বিতর্কের গল্প
আসিম মুনিরের সামরিক ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৮৬ সালে, জেনারেল জিয়াউল হকের আমলে। তিনি ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার (এমআই) প্রধান ছিলেন। এরপর ২০১৮ সালে আইএসআইয়ের মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে মাত্র ৮ মাসেই তাঁকে পদ ছাড়তে হয়।
পরে তাঁকে ট্রিপল এক্স কর্পসের কমান্ডার ও কোয়ার্টার মাস্টার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। ২০২২ সালে ইমরান খানের পতনের পর তাঁকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয় শেহবাজ শরিফ সরকার।
ক্ষমতা, অভিযোগ ও সমালোচনা
সেনাপ্রধান হওয়ার পর থেকেই মুনির পাকিস্তানের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হন। ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে ইমরান খানের দলকে দলীয় প্রতীকে অংশগ্রহণ করতে না দেওয়া, দলটির ওপর ধরপাকড় এবং ইমরান খানের কারাবরণ—সবকিছুর নেপথ্যে তাঁর ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ কারণে সেনাবাহিনী ও তাঁর ইমেজ বড় ধরনের সংকটে পড়ে। তবে ভারতের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক যুদ্ধাবস্থায় তাঁর নেতৃত্বে পাকিস্তানের সাফল্য তাঁকে আবারও জাতীয় বীরের মর্যাদায় পৌঁছে দিয়েছে।
ধর্মীয় শিক্ষা থেকে শুরু করে হাফেজে কোরআন হওয়া, সেনাবাহিনীতে দ্রুত উত্থান, আবার আইএসআই প্রধানের পদ হারানো ও সেনাপ্রধান থেকে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত হওয়া—সবমিলিয়ে আসিম মুনিরের জীবন এক নাটকীয় উত্থান-পতনের গল্প। এখন সময়ই বলবে, তিনি কীভাবে এই শক্তিশালী অবস্থানকে কাজে লাগান—পাকিস্তানের স্থিতিশীলতা ও রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণে।