
ক্ষেপণাস্ত্র
ইসরায়েলের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় ভয়াবহ হামলার জবাবে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের একাংশ ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ফাঁক গলে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
কীভাবে কাজ করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র?
ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র শক্তিশালী রকেট ইঞ্জিন দিয়ে উৎক্ষেপিত হয়ে মহাকাশ পর্যন্ত পৌঁছায় এবং মাধ্যাকর্ষণ ব্যবহার করে খাড়া পথে ফিরে আসে নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুতে। একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে (ICBM) তিনটি ধাপে রকেট থাকে, যা ধাপে ধাপে জ্বালানি খরচ করে মূল ওয়ারহেডকে লক্ষ্যে পাঠায়।
কতদূর যেতে পারে এসব ক্ষেপণাস্ত্র?
বিভিন্ন পাল্লার ভিত্তিতে ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে কয়েক ভাগে ভাগ করা হয়:
-
বিআরবিএম: ২০০ কিমি পর্যন্ত
-
এসআরবিএম: ১,০০০ কিমি পর্যন্ত
-
এমআরবিএম/আইআরবিএম: ১,০০০–৩,৫০০ কিমি
-
এলআরবিএম: ৩,৫০০–৫,৫০০ কিমি
-
আইসিবিএম: ৫,৫০০ কিমির বেশি
কত দ্রুত পৌঁছায় এই মিসাইল?
ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো শব্দের চেয়ে ৫ গুণ দ্রুত, অর্থাৎ ম্যাক ৫ বা তার বেশি গতিতে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে। ইরান থেকে ইসরায়েল ১,৩০০–১,৫০০ কিমি দূরে হওয়ায়, একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মাত্র ১২ মিনিটে আঘাত হানতে পারে।
বাধা দেওয়া এত কঠিন কেন?
এত উচ্চ গতি ও খাড়া পতনের কারণে এগুলোকে বাধা দেওয়া অত্যন্ত কঠিন। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বিভ্রান্তিকর ডিকয় বা পাল্টা ব্যবস্থাও ব্যবহার করে, যা প্রতিরক্ষাকে বিভ্রান্ত করে।
ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বনাম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র
ইরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্রুজ মিসাইলও ব্যবহার করেছে। এগুলো নিচু দিয়ে উড়ে যায়, রাডারকে ফাঁকি দিতে সক্ষম এবং দিক পরিবর্তন করতে পারে, তবে গতি কম। ইরানে থেকে ছোড়া ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলে পৌঁছাতে প্রায় ২ ঘণ্টা লাগে, যেখানে ড্রোন সময় নেয় ৯ ঘণ্টা।
ইরান ও ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি
-
ইরান: ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল তৈরি করছে। এর অস্ত্রাগারকে মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম ও অন্যতম আধুনিক বলে বিবেচনা করা হয়।
-
ইসরায়েল: পারমাণবিক-সক্ষম উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র অস্ত্রাগার রয়েছে, যা মার্কিন সহায়তায় গড়ে তোলা।
ইসরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
-
আয়রন ডোম: স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে ব্যবহৃত হয়
-
ডেভিড’স স্লিং: ৪০-৩০০ কিমি পাল্লার মিসাইল প্রতিহত করতে সক্ষম
-
অ্যারো সিস্টেম: ২,৪০০ কিমি পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার সাম্প্রতিক এই ক্ষেপণাস্ত্র লড়াই শুধু একটি আঞ্চলিক সংঘাত নয়; এটি সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করছে। ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল প্রযুক্তির বিপজ্জনক গতিবিধি এবং বিমান প্রতিরক্ষার সীমাবদ্ধতা এ অঞ্চলে সামরিক ভারসাম্য নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলছে।