ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
২৩ জানুয়ারি ২০২৫

Advertisement
Advertisement

ট্রুডোর পতনের পেছনে কি ভারত আছে?

প্রকাশিত: ১৭:১৬, ৬ জানুয়ারি ২০২৫

ট্রুডোর পতনের পেছনে কি ভারত আছে?

ট্রুডো ও মোদি

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বর্তমানে এক রাজনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছেন। এর ফলে তিনি পদত্যাগও করতে পারেন।

সোমবার ভারতীয় এনডিটিভির এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, নিজের লিবারেল পার্টির অভ্যন্তরেই ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ এবং বিরোধিতার মধ্যে সম্প্রতি ভারতের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ তুলে ধরেছিলেন ট্রুডো। সমালোচকেরা বলছেন, দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি এবং দলীয় কোন্দল থেকে দৃষ্টি সরানোর জন্যই ভারতকে লক্ষ্যবস্তু করেছিলেন তিনি।

গত এক বছরে কানাডার ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টির শন কেসি এবং ক্যান ম্যাকডোনাল্ডের মতো বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য প্রকাশ্যেই ট্রুডোর পদত্যাগ দাবি করেছেন। প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, ২০ জনেরও বেশি লিবারেল এমপি তাঁর পদত্যাগের জন্য একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন।

এর আগে কানাডার ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডের পদত্যাগ ট্রুডোর সরকারের জন্য বড় একটি ধাক্কা ছিল। গত ডিসেম্বরে পদত্যাগের কারণ হিসেবে ফ্রিল্যান্ড উল্লেখ করেছিলেনট্রুডোর সঙ্গে নীতিগত মতভেদ, বিশেষ করে মার্কিন শুল্ক ব্যবস্থাপনা অর্থনৈতিক কৌশল নিয়ে।

ডিসেম্বরের সেই সময়টিতে এক বিবৃতিতে ট্রুডো বলেছিলেন, ‘পরিবারের মতো, ছুটির সময় ঝগড়া হতে পারে। তবে আমরা মিলেমিশে এগিয়ে যাই। আমি আমার দল, দেশ এবং আপনাদের ভালোবাসি।

তবে ফ্রিল্যান্ড তাঁর পদত্যাগপত্রে ট্রুডোররাজনৈতিক কৌশলনিয়ে কড়া সমালোচনা করেন। তাঁর পদত্যাগের পর ট্রুডো জনসমক্ষে থেকে প্রায় অদৃশ্য ছিলেন এবং বেশির ভাগ সময় স্কি রিসোর্টে কাটিয়েছেন।

এদিকে, লিবারেল পার্টি সম্প্রতি দুটি উপনির্বাচনে পরাজিত হয়েছে, যা দলের অভ্যন্তরীণ সংকটকে আরও গভীর করেছে।

ছাড়া ট্রুডোর গুরুত্বপূর্ণ মিত্র নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) নেতা জাগমিত সিং বলেছেন, তিনি পার্লামেন্টে ট্রুডোর সরকারের বিরুদ্ধে আস্থা প্রস্তাব আনবেন। বর্তমানে শীতকালীন ছুটিতে থাকা কানাডার পার্লামেন্ট ২৭ জানুয়ারিতে পুনরায় অধিবেশনে বসবে।

যদি ট্রুডো পদত্যাগ করেন, তাহলে লিবারেল পার্টির প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে একজন জনপ্রিয় নেতা খুঁজে পাওয়া। সম্ভাব্য নেতৃত্বের তালিকায় ডমিনিক লে ব্ল্যাঙ্ক, মেলানি জোলি, ফ্রাঁসোয়া-ফিলিপ শ্যাম্পেইন এবং মার্ক কার্নির নাম উঠে এসেছে। তবে স্থায়ী নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়া দীর্ঘ সময় নিতে পারে, যা আসন্ন নির্বাচনের আগে দলের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।

লিবারেল নেতাকে মূলত একটি বিশেষ সম্মেলনের মাধ্যমে বাছাই করা হয়। এর ফলে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। যদি এর আগে নির্বাচন ডাকা হয়, তা হলে লিবারেল পার্টি নেতৃত্ব সংকটের কারণে বিপদে পড়তে পারে।

এদিকে বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পয়লিয়েভের নেতৃত্বে ট্রুডোর জনপ্রিয়তা তীব্রভাবে হ্রাস পাচ্ছে। পয়লিয়েভ অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোকে কাজে লাগিয়ে ট্রুডোর কার্বন ট্যাক্স বাতিল এবং কানাডার হাউজিং সংকট সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ট্রুডো ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, কানাডায় খালিস্তানি সন্ত্রাসী হরদীপ সিং নিজ্জারের হত্যাকাণ্ডে ভারত জড়িত। নিজ্জারকে কানাডার একটি গুরুদুয়ারার বাইরে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। ভারত এই অভিযোগকেহাস্যকরবলে উড়িয়ে দেয়।

এর পরবর্তী সময়ে ভারত কানাডার ছয়জন কূটনীতিককে বহিষ্কার করে এবং অটোয়ায় নিজের রাষ্ট্রদূত ফিরিয়ে আনে। একই সঙ্গে কানাডায় হিন্দু মন্দিরে হামলার মতো খালিস্তানি কার্যক্রম দুই দেশের সম্পর্ক আরও খারাপ করেছে।

ভারত বরাবরই নিজ্জারের হত্যাকাণ্ডে কোনো সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছে এবং ট্রুডোর প্রশাসনের বিরুদ্ধে খালিস্তানি সমর্থকদের তুষ্ট করার অভিযোগ তুলেছে।

ট্রুডোর এই অভিযোগ অনেকের কাছে তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত বলে মনে হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই অভিযোগ কানাডার খালিস্তানি ভোটারদের প্রভাবিত করার একটি কৌশল। তবে এটি উল্টো ফল বয়ে এনেছে। কারণ, অনেক কানাডিয়ান এটিকে দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো থেকে দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা হিসেবে দেখছেন।

জাস্টিন ট্রুডোর বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং তাঁর নেতৃত্বে লিবারেল পার্টির ভাঙন কানাডার রাজনীতিতে এক অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। তাঁর ভারতবিরোধী অভিযোগ তাঁকে সমর্থন না এনে আরও সংকটে ফেলেছে। এখন দেখার বিষয় হলোতিনি এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন, নাকি তাঁর পদত্যাগ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে।

Advertisement
Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531