খাবারের অভাবে ফিলিস্তিনের গাজায় লাখ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এছাড়া সুদানে চলমান সংঘাত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্ষুধা সংকটের কারণ হতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ (ইউএন)। খাবারের তীব্র সংকটের ফলে একটি জনগোষ্ঠী মৃত্যুর দিকে ঝুঁকে পড়ে তখনই দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। সাধারণত কোনো দেশের দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করে জাতিসংঘ।
তবে কখনও কখনও দুভিক্ষ কবলিত দেশটির সরকারের সাথে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা বা মানবিক সংস্থাগুলোর সাথে মিলে এই ঘোষণা জাতিসংঘ। সমন্বিত খাদ্য নিরাপত্তা পর্যায় বা আইপিসি নামের জাতিসংঘের একটি মাপকাঠির ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
তীব্রতার পাঁচটি ‘পর্যায়ের’ ভিত্তিতে একটি দেশের খাদ্য ঘাটতি বা খাবারের নিরাপত্তাহীনতার র্যাঙ্কিং করা হয়, যার পঞ্চম ও সর্বশেষ ধাপ দুর্ভিক্ষ। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করার জন্য একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় তিনটি জিনিস ঘটতে হবে:
১. কমপক্ষে ২০ শতাংশ পরিবার চরম খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হতে হবে
২. কমপক্ষে ৩০ শতাংশ শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগবে
৩. দশ হাজার মানুষের মধ্যে প্রতিদিন দু'জন প্রাপ্তবয়স্ক বা চারটি শিশু ‘সম্পূর্ণ অনাহার বা অপুষ্টিতে ভুগে কিংবা এবং রোগে আক্রান্ত হয়ে’ মারা যাবে
জাতিসংঘ জানিয়েছে উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষ আসন্ন এবং ২০২৪ সালের মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে যেকোনো সময় তা ঘটতে পারে। ইসরায়েলের ওপর হামাসের গত বছরের ৭ অক্টোবরের হামলার পর গাজায় কয়েক মাস ধরে চলা সংঘর্ষের ফলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
আইপিসির শ্রেণীবিভাগ অনুযায়ী, গাজার প্রায় ১১ লাখ মানুষ অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী ক্ষুধার্ত। পরিস্থিতি যদি সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে পৌঁছায় তাহলে ২০২৪ সালের জুলাইয়ের মধ্যে গাজার সবাই দুর্ভিক্ষের মুখে পড়বে।
আবার সুদানে চলমান সংঘাত দেশটিকে ‘সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে মানবিক দুর্দশায় নিমজ্জিত করছে’ বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘ। এটি বিশ্বের বৃহত্তম ক্ষুধা সংকটের কারণ হতে পারে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের এপ্রিলে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধের ফলে সুদানের প্রায় এক কোটি আট লাখ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখে পড়েছে।
অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গার একটি নামের মানবিক সংস্থার তথ্যমতে বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশে ‘ক্ষুধার মাত্রা খুবই উদ্বেগজনক’ অবস্থানে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, কঙ্গো, ইথিওপিয়ার টাইগ্রে অঞ্চল, পাকিস্তান, সোমালিয়া, সিরিয়া এবং ইয়েমেন।
২০২৪ সালের মার্চে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ডব্লিউএফপি সতর্ক করেছিল যে অনবরত বাড়তে থাকা গ্যাং সহিংসতার কারণে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুতর সংকটের মুখে হাইতি। সেখানকার প্রায় ১৪ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। তার চেয়ে এক ধাপ নিচের স্তরে আছে আরও ৩০ লাখ মানুষ।
আইপিসি বলছে, দুর্ভিক্ষ এবং চরম খাদ্য সংকটের একাধিক কারণ রয়েছে। মানবসৃষ্ট বা প্রাকৃতিক কারণে কিংবা দুটোর সংমিশ্রণে দুর্ভিক্ষ হতে পারে। অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গার বলছে, ‘বিশ্বব্যাপী ক্ষুধার মূল কারণ’ সংঘাত।