
জাকসু নির্বাচন
বেশকিছু অভিযোগ–পাল্টা অভিযোগের মধ্য দিয়েই শেষ হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলে স্থাপিত ২২৪টি বুথে এই ভোটগ্রহণ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
ভোট শুরুর পর থেকেই অনিয়মের অভিযোগ
নির্বাচনের শুরুতেই জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে ব্যালট পেপারে ভুল ধরা পড়ে। কার্যকরী সদস্য পদে তিনজন প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার কথা থাকলেও ব্যালটে নির্দেশনায় কেবল একজন প্রার্থীর পাশে টিকচিহ্ন দেওয়ার কথা লেখা ছিল। বিষয়টি নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়।
এরপর বেলা ১১টার দিকে উত্তেজনা দেখা দেয়, যখন ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী শেখ সাদী হাসান ছাত্রীদের হলে প্রবেশ করেন। নিরাপত্তাজনিত কারণে তাৎক্ষণিকভাবে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। তবে দুপুর ২টার দিকে আবার ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
একই সময়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের একটি কক্ষ থেকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান সোহানকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ভোট বর্জনের ঘোষণা
বিকেল পৌনে ৪টার দিকে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের অতিথি কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন ছাত্রদল মনোনীত জিএস প্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী। সেখানে তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। একই অভিযোগ তুলে নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন বিএনপিপন্থি তিন শিক্ষক—অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক শামীমা সুলতানা ও অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম খান।
কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা
ভোটের দিন ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। মোতায়েন ছিল ১ হাজার ৫৩৪ জন পুলিশ সদস্য, ৭ প্লাটুন বিজিবি ও ৫ প্লাটুন আনসার সদস্য। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা শুধু ক্যাম্পাসেই নয়, আশপাশের এলাকাতেও অবস্থান নেন, যাতে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা দ্রুত মোকাবিলা করা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সব গেট বন্ধ করে দেওয়া হয় ১০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে। খোলা রাখা হয় কেবল মীর মশররফ হোসেন হল সংলগ্ন গেট ও প্রান্তিক গেট। ১১ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসের ভেতরে ও আশপাশের ভাসমান দোকান এবং টারজান পয়েন্ট, পুরাতন পরিবহন চত্বর, নতুন কলা ভবন সংলগ্ন মুরাদ চত্বর, প্রান্তিক গেটের উত্তর পাশের মার্কেট ও প্রধান গেট সংলগ্ন দোকানগুলো বন্ধ রাখা হয়। তবে আবাসিক হলগুলোর ক্যান্টিন ও প্রয়োজনীয় দোকান খোলা রাখা হয়, যাতে শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় খাবার ও সরঞ্জাম পেতে পারেন।
যান চলাচলে বিশেষ নির্দেশনা
নির্বাচনী নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ১১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১২ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাকার স্টিকারযুক্ত ও নির্বাচন কমিশনের স্টিকারযুক্ত যানবাহন প্রবেশের অনুমতি পায়। সব স্টাফ বাসকে বাধ্যতামূলকভাবে প্রান্তিক গেট ব্যবহার করতে হয়। জরুরি বিভাগ–নিরাপত্তা, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ইন্টারনেট–এর জন্য যানবাহন চলাচলের অনুমতি রাখা হয়।