
এশিয়া কাপ
সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রশস্ত সড়কগুলোয় গাড়ির গতি ঘণ্টায় ১০০ মাইল ছোঁলেও ক্রিকেট নিয়ে সাধারণ মানুষের তেমন উচ্ছ্বাস নেই। তবু আমিরাতই আজ থেকে পরিণত হলো এশিয়ার ক্রিকেট উৎসবের কেন্দ্রস্থলে। আবুধাবি ও দুবাইয়ে শুরু হয়েছে এবারের এশিয়া কাপ, যা শুধু খেলাধুলার আসর নয়—বরং অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংস্কৃতির টানাপোড়েনকে ছাপিয়ে এক বড় মিলনমেলা।
উদ্বোধনী ম্যাচ
টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে আজ স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টা) আবুধাবিতে মুখোমুখি হচ্ছে আফগানিস্তান ও হংকং। ম্যাচের আগেই দুবাইয়ে হয়েছে অংশগ্রহণকারী আট দলের অধিনায়কের সংবাদ সম্মেলন। তবে সংবাদমাধ্যমের কাছে সবচেয়ে বড় খবর—আসন্ন ভারত–পাকিস্তান লড়াই।
ভারত–পাকিস্তান: অর্থনীতির হিসাব
দ্বিপক্ষীয় সিরিজ বহু বছর ধরে বন্ধ। তাই ভারত–পাকিস্তানকে মুখোমুখি আনার একমাত্র মঞ্চ হলো এশিয়া কাপ। আরব আমিরাতে টুর্নামেন্ট বসায় আগ্রহ দ্বিগুণ। টিকিটের দাম সর্বনিম্ন ১৪ হাজার দিরহাম হাঁকানো হলেও ভারত–পাকিস্তান ম্যাচের একটি টিকিটও এখন আর মিলছে না। গ্যালারিতে থাকবেন মূলত ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে যাওয়া প্রবাসীরাই। তাদের উপস্থিতি বাড়াবে স্পন্সরশিপ, ভরাবে এসিসি, বিসিসিআই ও পিসিবির কোষাগার।
বাংলাদেশের স্বপ্ন
বাংলাদেশ এশিয়া কাপে নিজেদের অভিযান শুরু করবে আগামী পরশু হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। তিনবার ফাইনালে উঠেও শিরোপা হাতছাড়া করা বাংলাদেশ এবার নামছে টানা তিনটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে। সাকিব–লিটনরা এবার বড় কিছুর স্বপ্ন দেখছেন।
নতুন প্রজন্মের তারকা
শচীন টেন্ডুলকার–ওয়াসিম আকরামদের প্রজন্ম কিংবা বিরাট কোহলি–রোহিত শর্মা, বাবর আজম–রিজওয়ানদের যুগ পেরিয়ে এবারের আসরে আসছে নতুন এক প্রজন্ম। তাই এশিয়া কাপও হতে যাচ্ছে নতুন যাত্রার প্রতীক।
আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কা
টি-টোয়েন্টি র্যাংকিং ও সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে আফগানিস্তান ভারত–পাকিস্তানের পর সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলে তারা প্রমাণ করেছে নিজেদের সক্ষমতা। অন্যদিকে, শ্রীলঙ্কা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হলেও সাম্প্রতিক ফর্ম ভালো নয়, ফলে সম্ভাবনার দৌড়ে কিছুটা পিছিয়ে আছে লঙ্কানরা।
সহযোগী দলগুলোর চমক
হংকং, ওমান ও স্বাগতিক আমিরাতের জন্য টুর্নামেন্টের পথ হয়তো দীর্ঘ হবে না। তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের অনিশ্চয়তা যে কোনো সময় বড় দলের পতন ডেকে আনতে পারে। এমন অঘটন হলে এশিয়া কাপের রোমাঞ্চ বহুগুণ বেড়ে যাবে।
গ্রুপিং নিয়ে বিতর্ক
এশিয়া কাপের গ্রুপিং সব সময়ই আলোচনায় থাকে। ভারত–পাকিস্তানকে সুবিধা দিতে গিয়ে অন্যান্য দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন ওঠে প্রতি আসরেই। তবে সমালোচনার পরও বাস্তবতা হলো—ভারত–পাকিস্তান দ্বৈরথ এশিয়া কাপকে বাঁচিয়ে রাখে। রাজনৈতিক বৈরিতা পেছনে ফেলে মাঠের লড়াইয়ে যখন মুখোমুখি হয় দুই দল, তখন এশিয়ার কোটি ক্রিকেটপ্রেমী মেতে ওঠে এক অনন্য উৎসবে।
সামনে ১৯ দিনের রোমাঞ্চ
আগামী ১৯ দিন ধরে চলবে ক্রিকেটীয় লড়াই। এ সময় ক্রিকেটপ্রেমীরা পাবেন উপমহাদেশীয় আবেগ, অর্থনীতি ও রাজনীতির বাইরে গিয়ে শুধুই খেলায় ডুবে থাকার এক বিরল সুযোগ।