
শেয়ালের মাংস
নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার ছয়ানি পূর্ব বাজারে দুলাল মাংস বিতান নামে একটি দোকানে শিয়ালের মাংস বিক্রি হচ্ছে—এমন খবর পেয়ে ৩ অক্টোবর অভিযান চালায় বন বিভাগের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন বিভাগ। উদ্ধার করা হয় ১৫ কেজি শিয়ালের মাংস।
পরে অভিযানকারীরা জানিয়েছেন, দুর্বৃত্তরা ছয়টি শিয়াল ধরেছিল। এর মধ্যে চারটিকে হত্যা করেছে। বাকি দুটি শিয়াল জীবিত উদ্ধার করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
নোয়াখালীভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অ্যানিমেল রাইট বিডি-৬৪’-এর প্রতিষ্ঠাতা রাইমন চৌধুরী রনিম এ বিষয়ে জানিয়েছেন, শিয়ালের মাংস ও তেল বাতব্যথা দূর করে বলে একটা বিশ্বাস আছে অনেকের মাঝে। নোয়াখালীতেও অনেকে এটা বিশ্বাস করেন। এ কারণে শিকারিরা গোপনে শিয়াল শিকার করে মাংস বিক্রি করেন। প্রতি কেজি মাংসের দাম আড়াই হাজার টাকার আশপাশে।
বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ অনুযায়ী, শিয়াল তফসিল-২-ভুক্ত প্রাণী। মানে হলো, শিয়াল রক্ষিত বন্য প্রাণী হিসেবে স্বীকৃত।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলে গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ১২টি অভিযানে ৬০ কেজি শিয়ালের মাংস উদ্ধার করা হয়েছে।
বন অধিদপ্তরের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক আবদুল্লাহ আস সাদিক এ বিষয়ে বলেন, শিয়ালের মাংস খেলে হাঁটুর ব্যথা, বাতব্যথা ও হাঁপানি রোগ সেরে ওঠে—এই বিশ্বাসের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তারপরও শিয়াল মেরে মাংস কেনাবেচা হয়।
সাদিক বলেন, ফাঁদ পেতে ধরা শিয়াল একেকটি ৫ থেকে ৭ হাজার টাকায় কেনা বেচা হয়। এরপর কিছু কিছু মাংসের দোকানে শিয়ালের মাংস বিক্রি হয়। গত পাঁচ বছরে শিয়াল হত্যার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে ৪৭টি। গত দুই মাসে নোয়াখালীতে শিয়াল হত্যার ঘটনায় ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ৫টি। এর মধ্যে ৪টি মামলায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে পাঁচজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।
প্রকৃতি সংরক্ষণের আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএন ২০১৫ সালে শিয়ালকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। বন্য প্রাণীর ওপর হুমকির মাত্রা অনুযায়ী আইইউসিএন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, বিপন্ন, ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রায় ঝুঁকিপূর্ণ—মোট চারটি শ্রেণিতে ভাগ করে থাকে।
ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাভুক্তকালে আইইউসিএন বলছে, শিয়াল একসময় সারা দেশে দেখা গেলেও এখন সেটি মূলত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। যমুনা নদীর পশ্চিমাংশে ও মৌলভীবাজার সীমান্তবর্তী এলাকায় কিছু শিয়াল দেখা যায়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম এ আজিজ বলেন, সারা দেশে একসময় শিয়াল দেখা যেত। আমার গ্রামে একসময় শিয়াল ছিল। এখন আর দেখা যায় না।
দেশে বর্তমানে শিয়ালের সংখ্যা ঠিক কত সেটা নিয়ে কোনো গবেষণা নেই বলে জানান অধ্যাপক এম এ আজিজ। তিনি বলেন, গবেষণা না থাকলে বন্য প্রাণী নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের অভিমত শিয়ালের সংখ্যা কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে।
দুটি কারণে প্রকৃতিতে শিয়ালের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। একটি হলো শিয়াল ইঁদুর ও এ-জাতীয় প্রাণী শিকার করে কমিয়ে রাখে। দ্বিতীয় কারণ, শিয়াল নানা রকম ফলমূল খেয়ে বীজ ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখে।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু শাহিন
জ্বালাময় বা দাহযুক্ত বাতই হচ্ছে গেঁটে বাত। এর ফলে এক বা একাধিক অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা হয়, লালচে ভাব হয় এবং ওই সব স্থানে গরম অনুভূত হয়। নারীর চেয়ে পুরুষের এ রোগ বেশি হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর ঝুঁকি বাড়ে। ঠিক সময়ে এর চিকিৎসা না নিলে পরিস্থিতি জটিল হয়, মানুষ কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন, চলাফেরা বাধাগ্রস্ত হয়। পুরোনো ও দীর্ঘস্থায়ী গ্রন্থিবাতে ভুগছেন ২ লাখ ১২ হাজার মানুষ।
এ রোগে অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হয়, অস্থিসন্ধি ফুলে যায় এবং কখনো কখনো অস্থিসন্ধি শক্ত ও অনমনীয় হয়ে যায়। এ ধরনের বাতে শরীরের যেকোনো অস্থিসন্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ সমস্যা শুরু হয় সাধারণত হাত ও পায়ের বিভিন্ন সন্ধি থেকে।
অধ্যাপক আবু শাহিন বলেন, শিয়ালের মাংস খেলে বা তেল ব্যবহার করলে বাতব্যথা দূর হয়—গ্রামাঞ্চলে এ ধরনের বিশ্বাস আগে অনেক বেশি ছিল। এখন কমে আসছে। কারণ, চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ছে, শিক্ষার হারও বাড়ছে।