ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
২২ মে ২০২৫

Advertisement
Advertisement

বাংলাদেশের আমদানিতে বিধিনিষেধের জবাবে ভারতের পাল্টা পদক্ষেপ, ৭৭০ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হুমকিতে

প্রকাশিত: ১৮:০৮, ১৮ মে ২০২৫

আপডেট: ১৯:২৯, ১৯ মে ২০২৫

বাংলাদেশের আমদানিতে বিধিনিষেধের জবাবে ভারতের পাল্টা পদক্ষেপ, ৭৭০ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হুমকিতে

সীমান্ত

বাংলাদেশের ভারতীয় পণ্যে বিধিনিষেধ ও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্কের জেরে ভারত বাংলাদেশ থেকে নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। গতকাল শনিবার (১৭ মে) এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেয় ভারত, যা দুই দেশের মধ্যে প্রায় ৭৭০ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই)।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কার্বনেটেড পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার, তুলার বর্জ্য, প্লাস্টিকের পণ্য (পণ্য তৈরির নির্দিষ্ট উপকরণ ব্যতীত) এবং কাঠের আসবাবপত্র ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম এবং পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ি শুল্কপয়েন্ট দিয়ে আমদানি করা যাবে না। এ ছাড়াও, বাংলাদেশি পোশাক এখন কেবলমাত্র কলকাতা ও মহারাষ্ট্রের নাভা শেভা সমুদ্রবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারবে।

প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ?

জিটিআরআই জানিয়েছে, ভারতের এই নিষেধাজ্ঞা কোনো বিচ্ছিন্ন সিদ্ধান্ত নয়। বরং বাংলাদেশ কর্তৃক ভারতীয় পণ্যের আমদানিতে ধারাবাহিক নিষেধাজ্ঞার জবাবে ভারত এই পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশ সম্প্রতি ভারতীয় সুতা, চাল, কাগজ, তামাক, মাছ ও গুঁড়ো দুধের আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে এবং ভারতের পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে ট্রানজিট ফি চালু করেছে—প্রতি কিলোমিটারে টনপ্রতি ১.৮ টাকা হারে।

ভারতের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের এসব সিদ্ধান্তে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া ঢাকা ভারতের বাজারকে যেভাবে ব্যবহার করছে, তা ভারসাম্যপূর্ণ নয় বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

চীন সংযোগ

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফর ও সেখানে ২.১ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি ভারতের কূটনৈতিক অসন্তোষের অন্যতম কারণ। সফরের সময় ড. ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে “সমুদ্রপথে যোগাযোগের সুযোগবিহীন স্থলবেষ্টিত অঞ্চল” হিসেবে উল্লেখ করেন, যা ভারতকে ক্ষুব্ধ করেছে।

বিপাকে পোশাক খাত

ভারতে বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করে, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের বড় অংশ। স্থলবন্দর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন এই রপ্তানি শুধুমাত্র দুটি সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে করতে হবে, যা খরচ ও সময় বাড়াবে। জিটিআরআই জানিয়েছে, এর ফলে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান

ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা আলোচনার মাধ্যমে বিষয়গুলোর সমাধান করতে চায়। তবে এর জন্য বাংলাদেশকে “সুন্দর পরিবেশ” তৈরি করতে হবে বলে তারা জানিয়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।

এই পরিস্থিতি দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন একটি চাপের সৃষ্টি করল বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এখন দেখার বিষয়, দুই দেশ উত্তেজনার পথ পরিহার করে আলোচনার টেবিলে বসে কি না।

Advertisement
Advertisement

আরো পড়ুন  


Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531