
সুব্রত বাইন
আজ মঙ্গলবার ভোরে কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর এলাকায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক হয়েছেন দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন। অভিযানে আরও আটক হয়েছেন আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদসহ মোট আটজন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বেলা সোয়া তিনটার দিকে প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করে।
ভোর পাঁচটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত কালীশংকরপুর এলাকার সোনার বাংলা মসজিদের পাশে একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করা হয়। অভিযানে সুব্রত বাইনের কাছ থেকে পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১০টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়েছে।
নব্বইয়ের দশকে ঢাকার অপরাধ জগতে সুব্রত বাইন ছিলেন এক আলোচিত নাম। মগবাজারের বিশাল সেন্টারের কাছ থেকে শুরু হওয়া তাঁর অপরাধজগতের উত্থান তাঁকে পরিচিত করে তোলে ‘বিশালের সুব্রত’ নামে। তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২০০১ সালে যে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করেছিল, তাতে তাঁর নাম ছিল। ইন্টারপোল তাঁর বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করেছিল, এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাঁর ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।
অন্যদিকে, মোল্লা মাসুদ ২০১৫ সালে ভারতে ধরা পড়েন এবং পরে জামিনে মুক্ত হয়ে ভারতেই অবস্থান করছিলেন। জানা যায়, তিনি সেখানে আবু রাসেল মো. মাসুদ নামে পরিচিত এবং এক ভারতীয় নাগরিককে বিয়ে করে সেখানেই বসবাস করছিলেন। মোল্লা মাসুদ মূলত মতিঝিল ও গোপীবাগ এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতেন এবং সুব্রত বাইনের হাত ধরেই অপরাধ জগতে প্রবেশ করেন।
তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে সাবেক সাংসদ কামাল মজুমদারের ভাগনে মামুন হত্যা, পুরান ঢাকার মুরগি মিলন হত্যা এবং খিলগাঁওয়ের তিলপাপাড়ায় ট্রিপল মার্ডারের মতো জঘন্য মামলাসহ অসংখ্য অভিযোগ ও জিডি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, যে বাড়িতে অভিযান চালানো হয় সেটির মালিক মীর মহিউদ্দিন। তিনতলা বাড়িটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ১৮ জন ছাত্রের মেস রয়েছে। তবে নিচতলায় দুই মাস আগে এক ব্যক্তি ভাড়াটিয়া হিসেবে ওঠেন এবং ১২ থেকে ১৫ দিন আগে তাঁর কাছে অতিথি পরিচয়ে আসা ব্যক্তিই ছিলেন সুব্রত বাইন।
অভিযানের সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা ছাত্রদের নিরাপদে রাখেন এবং দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তির খোঁজ করেন। প্রায় তিন ঘণ্টা অভিযান শেষে সেই দাড়িওয়ালা ব্যক্তি ও আরেক যুবককে গাড়িতে তোলা হয়—একজনের হাতে হাতকড়া, অন্যজনের শরীরে দড়ি বাঁধা ছিল।
সেনা বাহিনীর এক কর্মকর্তা ছাত্রদের জানান, "এখন বিস্তারিত বললে ভয় পাবে, পরে মিডিয়াতে দেখে নিও।"
এই অভিযান দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে চলমান কঠোর পদক্ষেপেরই অংশ, যা অপরাধ দমনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।