
শাহরিয়ার আল
গত শুক্রবার ঢাকার বড়বাগে ভাতিজির গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে ছিল এক শান্ত বিকেল। সেদিনই শেষবারের মতো কথা হয় সাম্যর (শাহরিয়ার আলম) সঙ্গে – এমনটাই বলছিলেন তার চাচা কায়সার উল আলম। কে জানত, সেই কথাই হবে শেষ কথা!
মঙ্গলবার রাতে টেলিভিশনের পর্দায় ছুরিকাঘাতে সাম্যর হত্যার খবর দেখে স্তব্ধ হয়ে যান কায়সার উল আলম। বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সম্ভাবনাময় এক তরুণকে এভাবে নির্মমভাবে হত্যা করা হবে, সেটা আমাদের ভাবনাতেই ছিল না। এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না, শাহরিয়ারের সঙ্গে আর কোনোদিন কথা হবে না।’
নিহত শাহরিয়ার আলম ওরফে সাম্য ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং স্যার এ এফ রহমান হলের আবাসিক ছাত্র (কক্ষ নম্বর ২২২)। হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন তিনি।
বুধবার সকাল, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার সড়াতৈল গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া। সাম্যর মৃত্যুসংবাদে ভেঙে পড়েছে পরিবার, স্বজন আর প্রতিবেশীরা। মৃতদেহ বাড়িতে আনার প্রস্তুতি চলছে। তাঁর চাচি তানিয়া খাতুন বলেন, ‘শাহরিয়ার বছরে দুই-তিনবার গ্রামে আসত, সব পারিবারিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকত। তাঁর সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এমন পরিণতি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।’
প্রতিবেশী ও দূর সম্পর্কের চাচা কবির সরদার জানান, ‘প্রতিবছর গ্রামে এসে সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলত সাম্য। নম্র-ভদ্র ছেলের এমন মৃত্যু মানা যায় না।’
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সাম্যর বাবা ফকরুল আলম ঢাকার রূপনগর আবাসিকে পরিবারসহ থাকেন। চার ভাইয়ের মধ্যে শাহরিয়ার ছিলেন সবার ছোট। তাঁর বড় ভাই আমিরুল ইসলাম (সাগর) ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক।
কায়সার উল আলম আরও জানান, সাম্যর মরদেহ বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। পরে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে গ্রামের বাড়িতে। সেখানে মাগরিবের নামাজের পর স্থানীয় মাদ্রাসা মাঠে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে স্তব্ধ পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং শিক্ষাঙ্গন। প্রতিটি চোখে এখন একটাই প্রশ্ন—এভাবে একটি সম্ভাবনাময় জীবন কীভাবে নিভে গেল? তদন্ত ও বিচার দাবি জানাচ্ছেন সবাই।