
মেঘা ভেমুরি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) ফিলিস্তিনের পক্ষে প্রকাশ্যে বক্তব্য দেওয়ার জেরে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন ছাত্রী মেঘা ভেমুরিকে এই বছরের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ থেকে নিষিদ্ধ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, মেঘার বক্তব্য অনুষ্ঠানের নিয়ম ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে।
? কে এই মেঘা ভেমুরি?
মেঘা ভেমুরি এমআইটির ২০২৫ সালের স্নাতক ব্যাচের সভাপতি এবং সমাবর্তন অনুষ্ঠানের প্রধান (মার্শাল) হিসেবে মঞ্চে থাকার কথা ছিল। তিনি কম্পিউটার সায়েন্স, নিউরোসায়েন্স এবং ভাষাতত্ত্বে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। জন্ম ও বেড়ে ওঠা জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আলফারেটা শহরে, মেঘা এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার ইউসিটি নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউটে গবেষণাও করেছেন।
তিনি এমআইটির রিটেন রেভল্যুশন নামের একটি ছাত্র সংগঠনের সদস্য, যেটি বিপ্লবী চিন্তাধারার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত।
?️ সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে মেঘার বক্তব্য
সমাবর্তনের প্রাক্কালে একটি অনুষ্ঠানে লাল কেফিয়েহ পরে মেঘা গাজায় ইসরায়েলের ‘নৃশংসতা’র তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি এমআইটির সঙ্গে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর গবেষণা সংযুক্তির বিরোধিতা করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ‘লজ্জাজনকভাবে’ সেই কাজে সহযোগিতা করার জন্য দায়ী করেন।
মেঘা বলেন:
“এমআইটি একটি বিদেশি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে গবেষণায় অংশ নিচ্ছে, সেটা হলো ইসরায়েলি বাহিনী। এর অর্থ হচ্ছে, ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের আক্রমণে শুধু আমাদের দেশ নয়, আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও জড়িত।”
তিনি আরও বলেন:
“আমরা দেখছি, ইসরায়েল কীভাবে ফিলিস্তিনকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে ফেলতে চাইছে। এটা লজ্জার যে এমআইটি এতে অংশীদার।”
?️ এমআইটির প্রতিক্রিয়া
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মেলিসা নোবেলস এক ই–মেইল বার্তায় মেঘাকে জানান, তিনি "পরিকল্পিতভাবে ও বারবার অনুষ্ঠান আয়োজকদের বিভ্রান্ত করেছেন।"
উপাচার্য বলেন,
“আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিই। কিন্তু আপনি মঞ্চে প্রতিবাদ চালিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছেন।”
ফলে, সমাবর্তনের দিন মেঘা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যা কার্যত তাঁকে অনুষ্ঠান থেকে সম্পূর্ণরূপে বহিষ্কারের শামিল।
? পটভূমি: ছাত্র আন্দোলন ও এমআইটি
মেঘা দাবি করেন, এর আগে এমআইটির আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও গ্র্যাজুয়েট ছাত্র ইউনিয়ন ভোটের মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছিল এবং গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিল। তিনি মনে করিয়ে দেন, অনেক শিক্ষার্থীই ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে এবং তাদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন।
?️ মতপ্রকাশ না শৃঙ্খলা?
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বনাম প্রশাসনিক শৃঙ্খলার প্রশ্ন আবারও সামনে এসেছে।
ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থী প্রতিবাদ দমন ও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়ে আগে থেকেই বিতর্ক চলছিল, আর মেঘার ঘটনা সেটিকে আরও জোরালো করে তুলেছে।
একদিকে বিশ্বজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনপন্থী ছাত্র আন্দোলনের ঢেউ, অন্যদিকে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ও রাজনৈতিক চাপ—এই দুইয়ের মধ্যে মেঘা ভেমুরি হয়ে উঠেছেন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বনাম প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলার প্রতীকী মুখ। তাঁর সমাবর্তন থেকে নিষিদ্ধ হওয়া শুধু একক কোনো ছাত্রনেত্রীর গল্প নয়, বরং এটি একটি বৃহত্তর আন্দোলন ও মতাদর্শিক সংঘাতের প্রতিফলন।