
ভারতের সেনাপ্রধান অনিল চৌহান
ভারতের সশস্ত্র বাহিনী প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছে, গত মে মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষে তারা কয়েকটি যুদ্ধবিমান হারিয়েছে। তবে যুদ্ধবিমান হারানোর নির্দিষ্ট সংখ্যা জানানো হয়নি। ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল অনিল চৌহান এ প্রসঙ্গে বলেন, "সংখ্যা নয়, বরং কেন সেগুলো ভূপাতিত হলো, সেটাই আমাদের বোঝা উচিত।"
শাংরি-লা সংলাপে অংশ নিতে সিঙ্গাপুরে অবস্থানকালে ব্লুমবার্গ টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতীয় সেনাপ্রধান এ কথা বলেন।
✈️ যুদ্ধবিমান ভূপাতনের স্বীকারোক্তি
জেনারেল চৌহান বলেন, পাকিস্তান দাবি করেছে তারা ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে তিনটি আধুনিক রাফাল জেট। তবে তিনি এই দাবিকে ‘একেবারেই ভুল’ বলে মন্তব্য করেন।
“প্রধান বিষয় হলো, কী ভুল হয়েছিল, আর আমরা কীভাবে তা শোধরালাম,” বলেন সেনাপ্রধান।
ভারতীয় বাহিনী সংঘাতের প্রথম দিকের ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা করে দ্রুত কৌশল পরিবর্তন করে। সেনাপ্রধান বলেন, “আমরা কৌশলগত ভুলগুলো বুঝে তা সংশোধন করেছি এবং দুই দিন পর সফলভাবে পাকিস্তানের গভীরে লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছি।”
? সংঘর্ষের ভয়াবহতা
সেনাপ্রধানের ভাষ্যমতে, ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানের ৩০০ কিলোমিটার গভীরে গিয়ে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছিল, যদিও পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা ছিল “কড়া”।
এ বছরের ৭ মে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে উভয় পক্ষই একে অপরের ওপর যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। সীমান্তজুড়ে চলেছে গুলি বিনিময় ও বোমা হামলা।
সাংবাদিকদের মতে, এটি গত ৫০ বছরে দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষ।
☢️ পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা উড়িয়ে দিল ভারত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘর্ষে পারমাণবিক যুদ্ধ ঠেকাতে সহায়তা করেছে। এই মন্তব্য প্রসঙ্গে ভারতীয় সেনাপ্রধান কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও বলেন, “পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কোনো বাস্তব আশঙ্কা ছিল না।”
তিনি আরও বলেন, “আমার মতে প্রচলিত সামরিক অভিযান ও পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের মধ্যে বড় ব্যবধান রয়েছে।”
ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পাকিস্তানের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগের পথ খোলা ছিল, যার ফলে উত্তেজনার মধ্যেও কিছু নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে।
?️ চীনের সহায়তা ও ভারতের প্রতিক্রিয়া
একটি সরকারি গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, সংঘর্ষ চলাকালে পাকিস্তানকে স্যাটেলাইট ও আকাশ প্রতিরক্ষায় সহায়তা দিয়েছে চীন। এ প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, “ওদের চীন থেকে কেনা অস্ত্র কার্যকর ছিল না, আমাদের আক্রমণ সফল হয়েছে।”
?️ ভবিষ্যৎ নীতিগত অবস্থান
ভারতীয় সেনাপ্রধান স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে, ভারত যুদ্ধবিরতির পক্ষপাতী, তবে ভবিষ্যতে যদি কোনো সন্ত্রাসী হামলা হয়, তাহলে ভারত প্রতিশোধ নিতে পিছপা হবে না।
তিনি বলেন, “আমরা আমাদের লাল রেখা ঠিক করে দিয়েছি। যদি কেউ তা লঙ্ঘন করে, তার জবাব অবশ্যই দেওয়া হবে।”
? পটভূমি: সংঘাতের সূত্রপাত
এ সংঘাতের সূত্রপাত ঘটে গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর। ভারত অভিযোগ করে, এই গোষ্ঠীর সঙ্গে পাকিস্তানের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, যদিও ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করেছে।
এই সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে উত্তেজনার মাত্রা কোথায় পৌঁছাতে পারে, এবং দুই পক্ষ কৌশলগত ভুল থেকে কীভাবে দ্রুত শিখে প্রতিক্রিয়া দেয়, তার একটি বিরল দৃষ্টান্ত দেখা গেল।
যদিও সংঘাত বড় আকারে গড়ায়নি, তবে অঞ্চলজুড়ে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা বেড়েছে, যার প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যের ওপর পড়তে পারে।