বাংকার
বিশ্বসেরা ধনীরা সব ধরনের বিলাসিতার আয়োজন যেমন করে থাকেন, তেমনি কিছু ব্যতিক্রম কাজ করেন। তবে বাংকার করার খবরটি হয়তো এবারই প্রথম শোনা যাচ্ছে। বাংকার শব্দটি বোধ হয় সামরিক বাহিনীর সঙ্গেই বেশি মানানসই। শত্রুর হাত থেকে বাঁচতে বা আক্রমণের আগে কৌশলগত কারণেই বাংকারে আশ্রয় নেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু এটি যদি হয় বিশ্বের ধনকুবেরদের বাসনা, তাহলে তা আলোচনার বিষয় হওয়াই স্বাভাবিক।
যেনতেন ধনী নয়, পৃথিবীর সবচেয়ে পরিচিত ধনীরা নাকি নিজেদের জন্য গোপনে বাংকার বানাচ্ছেন। নিরাপদ আশ্রয় গড়াটাই নাকি তাঁদের মূল উদ্দেশ্য।
এসব ধনীরা সুরক্ষিত বাড়িতে থাকেন, নিরাপত্তাকর্মীদের পাহারায় রাখেন, এরপরও অনিরাপদ বোধ করছেন কেন? জবাবে যে উত্তরটা সবচেয়ে বেশি শোনা যায় তা হলো, ‘পৃথিবীর শেষ দিন’-এর ভয়। অর্থাৎ পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার দিনেও যেন তাঁরা নিজেদের নিরাপদ স্থানে রাখতে পারেন, সেটা মাথায় রেখেই এত আয়োজন। অবশ্য এর বাইরেও আছে নানা কারণ।
কে কে তালিকায় আছেন?
এই তালিকায় আছেন ফেসবুকের সহ প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। তাঁর নির্মাণাধীন বাংকার নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই আলোচনা চলছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের কাওয়াই দ্বীপে প্রায় ২৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে এই প্রকল্পটিতে প্রায় ১ হাজার ৪০০ একর জায়গা নিয়ে প্রাসাদ, অত্যাধুনিক অট্টালিকা, ট্রি হাউস, টানেলসহ থাকবে পাঁচ হাজার বর্গমিটারের ভূগর্ভস্থ আশ্রয়স্থল।
নিজস্ব শক্তি ও খাদ্য সরবরাহব্যবস্থা এটিকে পূর্ণতা দেবে। যেকোনো ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করতে রয়েছে বিস্ফোরণ–প্রতিরোধী দরজা। পৃথিবীর মানচিত্রে একটু চোখ বোলালেই বুঝবেন, এই দ্বীপকেই কেন বেছে নিয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটার দূরে প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে এই দ্বীপের অবস্থান। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে স্বচ্ছন্দে জীবন কাটাতে পারবেন বলেই ভাবছেন প্রযুক্তিজগতের এই টাইকুন।
অর্থ লেনদেনের সেবা পেপ্যালের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পিটার থিয়েল নিউজিল্যান্ডের একটি দ্বীপে বাংকার নির্মাণ করছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্যাম অল্টম্যানেরও তাঁর সঙ্গে যোগ দেওয়ার জোর গুঞ্জন আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আইডাহো অঙ্গরাজ্যের ধনকুবের ফ্র্যাঙ্ক ভ্যান্ডারস্লুটও কিনেছেন দুই হাজার একর জমি। এ ছাড়া বহু ধনী শ্রেণির মানুষ বিকল্প আবাসস্থল বা বাংকার তৈরি করেছেন বা পরিকল্পনা করছেন। এ ক্ষেত্রে একটা বড় অংশের প্রথম পছন্দ নিউজিল্যান্ড।
টেসলা মোটরসের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কের নামে এসব গুঞ্জন শোনা যায় না। পৃথিবীতে বড় দুর্যোগ নেমে এলে তিনি হয়তো মঙ্গলগ্রহে আবাসস্থল গড়বেন। অন্তত তাঁর কার্যক্রম দেখে তা-ই মনে হয়।
ধনকুবেররা ভবিষ্যতের এক অজানা আশঙ্কার কথা ভেবে প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন। কিন্তু কেন? তাঁদের এমন কিসের ভয়, যা অন্য সাধারণ মানুষ জানে না৷