ফিফা দ্য বেস্টের লড়াই শেষ। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী কিলিয়ান এমবাপ্পেকে হারিয়ে শিরোপাটি উঠেছে লিওনেল মেসির হাতে। ফিফা এককভাবে বর্ষসেরা পুরস্কার দেয়ার পর এটি মেসির দ্বিতীয় ট্রফি। আর ব্যালন ডি’অর ও ফিফা দ্য বেস্ট মিলিয়ে এটি সপ্তম বর্ষসেরা পুরস্কার।
এবার লড়াই হবে ফুটবলারদের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ মর্যাদার পুরস্কার ব্যালন ডি’অর নিয়ে। যে ট্রফিটি পাওয়া যে কোনও খেলোয়াড়ের জন্যই সম্মানজনক। যদিও গত দেড় যুগ ধরে এ ট্রফিটি কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। মাঝে লুকা মদ্রিচ আর করিম বেনজেমা সেখানে বাধা হয়েছিলেন। মদ্রিচ ২০১৮ সালে এবং বেনজেমা ২০২২ সালে এ ট্রফিটি জিতেন।
চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে সেরা ফুটবলারের হাতে তুলে দেয়া হবে ২০২৩ সালের ব্যালন ডি’অরের ট্রফিটি। যেটি ৬৭তম ব্যালন ডি’অর ট্রফি। মৌসুমের এখনো ৩ মাস বাকি। এখনই আলোচনায় কার হাতে উঠবে ব্যালন ডি’অর।
তবে দ্য বেস্টের মতো এবারের ব্যালন ডি’অর ট্রফির ক্ষেত্রেও বেশ প্রভাব রাখবে কাতার বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স। সে হিসেবে বলা যায় ট্রফিটি ঘিরে মূলত লড়াইটা হবে বিশ্বকাপের ২২তম আসরের দুই ফাইনালিস্ট ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপ্পে ও আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসির মধ্যে। এর কারণটাও স্বাভাবিক।
কেননা ২০২২ সালের ব্যালন ডি’অরের সময়ে বেশ কিছু পরিবর্তন আনে ফ্রান্স ম্যাগাজিন কর্তৃপক্ষ। যেখানে ক্যালেন্ডার বছরের পরিবর্তে একটি ফুটবল মৌসুমকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের পরিবর্তে জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত সময়কে ব্যালন ডি’অরের জন্য বিবেচনা করা হবে বলে জানায়। যার কারণে কাতার বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স অন্তর্ভুক্ত হয়নি ২০২২ ব্যালন ডি’অরের তালিকায়।
কাতার বিশ্বকাপ শেষ। এখন চলছে ক্লাব ফুটবলের লড়াই। মেসি ও এমবাপ্পে দুজনই ক্লাব ফুটবলে পিএসজির হয়ে খেলেন। বর্তমানে পিএসজি ফরাসি লিগ ওয়ানে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে রয়েছে। সেই সঙ্গে ইউরোপ সেরার লড়াইয়ে শেষ ষোলোতে রয়েছে। প্রথম লেগে যদিও তারা ঘরের মাঠে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে পরাজিত হয়েছে। তবে এখনো ৯০ মিনিট পাচ্ছে ঘুরে দাঁড়ানোর। তবে সেটি যে বেশ কঠিন হবে তা বলাই যায়। কেননা ম্যাচটি যে খেলতে হবে বায়ার্নের মাঠ অ্যালিয়েঞ্জ অ্যারেনায়।
মেসিরা যদি শেষ পর্যন্ত শেষ ষোলোর ফাঁড়া কাটিয়ে কোয়ার্টার ও সেমির বাঁধা পেরিয়ে ফাইনালে খেলতে পারে। তবে বলা চলে এই দুইজনের যে কারো কাছেই যাচ্ছে এবারের ব্যালন ডি’অরের ট্রফিটি। কেননা তখন তৃতীয় ব্যক্তির পারফরম্যান্স অনেকটা ফিঁকে হয়ে যাবে। আর তারা যদি বায়ার্নের ঘরে গিয়ে হেরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বিদায় নেয় তাহলে ইউরোপ সেরার ট্রফিটি যার হাতে যাবে তার সঙ্গে লড়াই করতে হবে মেসি-এমবাপ্পেদের। আর সে লড়াইয়ে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে আছেন ম্যানসিটির আর্লিং হালান্ড।
চতুর্থ ব্যক্তি হিসেবে আছেন ইউরোপা লিগের শেষ ষোলো পার করা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মার্কাস রাশফোর্ড। পঞ্চম ব্যক্তিটি হলেন রিয়াল মাদ্রিদের ব্রাজিলিয়ান সেনসেশন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। ঘটনাক্রমে পিএসজি, ম্যানসিটি ও ম্যানইউ যদি শিরোপার রেস থেকে ছিটকে যায় এবং রিয়াল মাদ্রিদ যদি রেকর্ড ১৫তম বারের মতো ইউরোপা সেরার ট্রফি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা ঘরে তোলে তবে ব্যালন ডি’অরের রেসে মেসি-এমবাপ্পের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াবেন ভিনিসিয়ুস কিংবা করিম বেনজেমাদের মতো রিয়ালের অন্যকেউ।
চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ব্যালন ডি’অরের পাওয়ার র্যাঙ্কিংয়ে মেসি ২৯ গোল ও ২০টি অ্যাসিস্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছেন। তার ব্যালন ডি’অর জয়ে যে বিষয়টি এগিয়ে রাখছে তা হলো ফুটবল বিশ্বকাপ। পুরো বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচ থেকে করেছেন ৭ গোল সেই সঙ্গে করিয়েছেন ৩ গোল। আর ফাইনালের ম্যাচ সেরাসহ বিশ্ব আসরে পেয়েছেন সর্বোচ্চ ৫ বার ম্যাচ সেরার পুরস্কার। যা তাকে অষ্টম ব্যালন ডি’অরের জয়ের পথে অনেকটা এগিয়ে রাখছে।
দ্বিতীয় স্থানে থাকা কিলিয়ান এমবাপ্পে চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৩৮ গোল ও ৯টি অ্যাসিস্ট করেছেন। ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনাল খেললেও শিরোপা ঘরে তুলতে না ব্যর্থ তিনি। তবে ফাইনালে হ্যাটট্রিকসহ পুরো টুর্নামেন্টে ৭ ম্যাচ থেকে ৮ গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন ২ গোল। আর ম্যাচ সেরা হয়েছেন ৪টিতে।
তৃতীয় স্থানে থাকা ম্যানসিটির আর্লিং হালান্ডও আছেন চলতি মৌসুমে দুর্দান্ত ফর্মে। তিনি এখন পর্যন্ত ৩৪ গোলের পাশাপাশি করেছেন ৪ অ্যাসিস্ট। তবে তার দুঃখ বিশ্বকাপ মঞ্চে তার দেশ নরওয়ের সুযোগ না পাওয়া। তাই প্রিমিয়ার লিগ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা ঘরে তুলতে পারলে মেসি-এমবাপ্পের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবেন তিনি।
এসএস