
শাহবাগ
বাংলাদেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবির প্রেক্ষিতে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র সঙ্গে জামায়াতে ইসলামি ও হেফাজতে ইসলামের সম্মিলিত অবস্থান এবং অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সাম্প্রতিক মন্তব্য এই ইঙ্গিতই দিচ্ছে যে, বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মোড়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
গতকাল (৯ মে) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে আইনের কোনো ঘাটতি নেই। সন্ত্রাসবিরোধী আইনসহ একাধিক আইন ব্যবহার করে তা করা সম্ভব বলে জানান তিনি। উপদেষ্টাদের মধ্যে এ নিয়ে মতভেদ না থাকলেও পদ্ধতি নিয়ে আলাদা মত থাকতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এমনকি প্রয়োজন হলে আইসিটি আইনও দ্রুত সংশোধন করা যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার আইনি ভিত্তি
বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার নজির নতুন নয়।
-
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন অনুসারে, কোনো দল রাষ্ট্রবিরোধী বা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকলে তা নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার সুযোগ রয়েছে।
-
১৯৭৮ সালের রাজনৈতিক দল অধ্যাদেশ অনুযায়ী, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বা অখণ্ডতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করা, গোপন সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা বা সশস্ত্র বাহিনী পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করা অবৈধ।
-
২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুসারে, জঙ্গি বা সন্ত্রাসী কার্যকলাপে যুক্ত দল বা সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা যায়।
এই আইনের ভিত্তিতেই অতীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও উগ্রবাদী সংগঠন নিষিদ্ধ হয়েছে।
অতীতের নিষিদ্ধ দল ও সংগঠনের তালিকা
-
জামায়াতে ইসলামি: ১৯৭১ সালে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে দলটি নিষিদ্ধ হয়; ১৯৭৯ সালে পুনরায় রাজনীতিতে ফিরে আসে; ২০১৩ সালে নিবন্ধন বাতিল হয়; ২০২4 সালে অন্তর্বর্তী সরকার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে।
-
ইসলামী ছাত্রশিবির: জামায়াতের ছাত্র সংগঠন হিসেবে ২০২৪ সালে নিষিদ্ধ হলেও পরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
-
পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি (পিবিএসপি) এবং পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (পিবিসিপি): সশস্ত্র চরমপন্থি কর্মকাণ্ডের জন্য এখনও নিষিদ্ধ।
-
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ: ২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সহিংসতার দায়ে নিষিদ্ধ হয়।
-
জেএমবি ও হিজবুত তাহরির: ২০০৫ ও ২০০৯ সালে যথাক্রমে দেশব্যাপী বোমা হামলা ও খেলাফত কায়েমের প্রচেষ্টার কারণে নিষিদ্ধ।
চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলের প্রেক্ষাপট
সম্প্রতি কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট নামের একটি জাতিগত সংগঠন আলোচনায় উঠে আসে। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ থাকলেও আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এই সংগঠনের বিরুদ্ধে দমন অভিযান চালানো হয়।
রাজনীতির মোড় ঘোরার শঙ্কা
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি ও এ নিয়ে উপদেষ্টাদের একমত হওয়ার বার্তা দেশের রাজনীতিতে নতুন বাস্তবতা তৈরি করছে। একই সঙ্গে, জামায়াত-হেফাজত-এনসিপি-র মতো দল ও গোষ্ঠীর ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠস্বর রাজনৈতিক মেরুকরণকে আরও গভীরতর করে তুলছে। অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, আইন ব্যবহার করে দল নিষিদ্ধ করা সম্ভব হলেও তার রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ব্যাপক হতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে—নিষিদ্ধকরণ রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা আনবে, না আরও অস্থিরতা তৈরি করবে?