দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় কৌশলের অংশ হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়া ঘটনায় নাখোশ দলের মনোনীত প্রার্থীরা। অনেক আসনেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর কারণে নৌকা প্রতীক হেরে যেতে পারে এমন দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে দলের মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে। এছাড়া দলীয় কোন্দলের কারণে সংঘাতের আশঙ্কাও করা হচ্ছে। নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ মনে করছেন, এর মাধ্যমে দলের তৃণমূলে একটা স্থায়ী বিভক্তি তৈরি হতে পারে। যা জোড়া লাগাতে হিমশিম খেতে হবে।
এরই মধ্যে শরীয়তপুর-২ আসনের নড়িয়া এলাকায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণে দুই পক্ষের অন্তত পাঁচজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন যে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অনেকে তাদের চ্যালেঞ্জে ফেলতে পারেন। তাদের মধ্যে আছে সংঘাতের আশঙ্কাও।
শরীয়তপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম। আর এই আসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য খালেদ শওকত আলী। তিনি এই আসনের প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার শওকত আলীর ছেলে। এই দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।
আওয়ামী লীগের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোনো কোনো আসনে দলের মনোনীত প্রার্থীরা অনেকটা একা হয়ে পড়েছেন। কারণ, দলের নেতৃত্বস্থানীয় প্রায় সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। আবার কোথাও কোথাও মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে বর্তমান সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এমন জটিল পরিস্থিতিতে প্রশাসন ও দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও বিভক্ত হয়ে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মন্ত্রিসভার একজন সদস্য জানান, তার আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, কে জিতবে কে হারবে, সেটা পরের বিষয়। কিন্তু দলের তৃণমূলে স্থায়ীভাবে একটা ক্ষত তৈরি হয়ে যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, ১৭ ডিসেম্বরের পর স্বতন্ত্র কৌশলে কিছুটা বদল আসতে পারে। তবে সেই বদলটা কী, তা এখনো স্পষ্ট নয় নেতাদের কাছে।
আওয়ামী লীগের এই কৌশলের পেছনে দুটি লক্ষ্য কাজ করেছে। প্রথমত, একসঙ্গে অনেক প্রার্থী নামিয়ে দিয়ে নির্বাচনের একটা আবহ তৈরি করে বিএনপিসহ বিরোধীদের অবরোধ কর্মসূচি ভোঁতা করে দেওয়া।
দ্বিতীয়ত, ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার পর্যন্ত ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কারণ, জাতীয় পার্টি ও অন্য কোনো দল যদি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে, তখন নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হারাবে। এটাকে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে তা মোকাবিলা করার জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাখা হচ্ছে।