ঢাকা,  মঙ্গলবার
০১ জুলাই ২০২৫

Advertisement
Advertisement

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে পাল্টে যাচ্ছে মস্কো-তেল আবিব সম্পর্ক

প্রকাশিত: ২২:৩৫, ১৫ অক্টোবর ২০২৩

আপডেট: ১৪:১২, ১৭ অক্টোবর ২০২৩

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে পাল্টে যাচ্ছে মস্কো-তেল আবিব সম্পর্ক

অনেক বছর ধরেই ক্রেমলিনের সঙ্গে উষ্ঞ সম্পর্ক বজায় রয়েছে ইসরায়েলের। এমনকি ইউক্রেনে হামলা এবং ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় শত্রু ইরানের সঙ্গে সুসম্পর্কও রাশিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কে চিড় ধরাতে পারেনি। নেতানিয়াহু বলেছেন, পশ্চিমারা চাপ দিলেও তিনি ইউক্রেন যুদ্ধে কোনো পক্ষকে সমর্থন করবেন না। মিত্র পশ্চিমারা চাপ দিলেও নেতানিয়াহু কিয়েভে কোনো অস্ত্র বা বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঠাননি।

দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এর বিশ্লেষণে আরও বলা হয় হামাসের আক্রমণের পর বিশ্বনেতারা নেতানিয়াহুকে সান্ত্বনা দিতে ফোন করলেও সেই তালিকায় নেই পুতিন। ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে কাজ করতেন ভেরা মিচলিন, এখন যুক্তরাজ্যের থিঙ্কট্যাঙ্ক সিম্পোডিয়ামের শিক্ষা-প্রধান। তিনি বলেন, পুতিন আর নেতানিয়াহুর মধ্যে ফোনে কথা হতো। কিন্তু রাশিয়ার পদক্ষেপের জন্যই নিশ্চয় এখন আর দুজনের কথা হচ্ছে না।

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার ভূমিকায় বড় পরিবর্তন এসেছে। রাশিয়া ইসরায়েলের মৈত্রীর অবসান এই পরিবর্তনের একটি আদর্শ উদাহরণ।

এক সময় রাশিয়া অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলত। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইরানের সঙ্গে রাশিয়ার  সম্পর্কের ভারসাম্য বদলে গেছে। এছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য অস্ত্র মিত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যে মিসর, ইরাক সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো আরব দেশগুলোর সঙ্গেও সম্পর্ক জোরদার করছে রাশিয়া।

রাশিয়ার এখন ইরানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তুলছে। ইরান মস্কোকে কয়েক হাজার আত্মঘাতী শাহেদ ড্রোন দিয়েছে। যুদ্ধে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত করতে ব্যবহার করা হয়েছে এসব ড্রোন। এখন আবার ইরান সেসব ড্রোনের যন্ত্রাংশ পাঠাচ্ছে যাতে তা রাশিয়ায় সংযোজন করে নেয়া যায়।

বিনিময়ে রাশিয়া ইরানের বিমান বাহিনীকে ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান দিয়েছে। এছাড়া ইরানের কাছে সু-৩৫ জেট ফাইটার বিক্রি করার জন্য চুক্তির চিন্তা ভাবনা রাশিয়া, যা মধ্যপ্রাচ্যে বিমানশক্তির ভারসাম্য বদলে দিতে পারে।

কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের রাশিয়া-ইরান সম্পর্কের বিশেষজ্ঞ নিকোলাই কোজানভ বলেন, রাশিয়া এমন অংশীদার খুঁজছে যে তাকে অস্ত্র সরবরাহ করতে পারবে। কিন্তু উভয় দেশ পশ্চিমাবিরোধী মনোভাবের হওয়ায়  সম্পর্ক দৃঢ় হয়েছে।

এদিকে হামাসের সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো রাশিয়ার। গত এক বছরে হামাসের অন্তত দুটি প্রতিনিধি দল মস্কো সফর করেছে। গত সপ্তাহে ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান সঙ্ঘাতে পুতিনের অবস্থানের প্রশংসা করে টেলিগ্রামে নিজেদের চ্যানেলে একটি বার্তা লিখেছে হামাস।

হামাসের এই আকস্মিক হামলার নিন্দা জানায়নি  রাশিয়া। উল্টো ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার অধিকারের কথা বলেছে মস্কো। গুরুলেভ লিখেছেন, 'ইসরায়েল কার মিত্র? যুক্তরাষ্ট্রের। ইরান তার আশপাশের মুসলিম বিশ্ব কার মিত্র? আমাদের।

ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং ইসরায়েলের আরব প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে মস্কো যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তার সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধের সময় ইসরায়েলের ব্যাপারে মস্কোর অবস্থানের অনেক মিল রয়েছে। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যতিব্যস্ত এবং দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলোর ওপর প্রভাব বজায় রাখার উদ্দেশ্যে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় শত্রুদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল রাশিয়া। এর জেরে ১৯৬৭ সালে ছয়-দিনের যুদ্ধ এবং ছয় বছর পর ইয়ম কিপ্পুর যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

২৩ বছর ধরে রাশিয়ার শাসনক্ষমতায় আছেন পুতিন। এই সময় তিনি যখনই দেশের সমস্যায় পড়েছেন তখন মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় এবার সেরকম করাটা কঠিনই ছিল।

এই মুহূর্তে ইসরায়েলে হামাসের হামলায় রাশিয়ার সুবিধাই হলো। গত সপ্তাহ পর্যন্ত রাশিয়াসহ বিশ্ব মিডিয়ায় প্রধান খবর ছিল ইউক্রেন যুদ্ধ। কিন্তু গত সপ্তাহ থেকেই রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর মনোযোগের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে গাজা ইসরায়েল।

শীর্ষ রুশ কর্মকর্তারা বলছেন, যুদ্ধের অন্যান্য উপকারিতাও দেখছেন তারা। হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের সুনামের ওপর বড় আঘাত হয়ে এসেছে বলে মনে করছেন তারা।

তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল ইউক্রেনকে একসঙ্গে কতদিন সাহায্য পাঠানো অব্যাহত রাখতে পারবে, তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে ওয়াশিংটনকে।

ভেরা মিচলিন বলেন, হামাসের হামলার পর রাশিয়ার প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল এই সঙ্ঘাত তাদের জন্য আশীর্বাদ। লড়াই তাদের ওপর থেকে নানাভাবে চাপ সরিয়ে নিচ্ছে। গত সপ্তাহে হামাসের হামলার পর প্রথম মন্তব্যেই যুক্তরাষ্ট্রকে তুলোধুনা করেন পুতিন। তিনি বলেন, এই আক্রমণ 'যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতির ব্যর্থতার স্পষ্ট উদাহরণ'

Advertisement
Advertisement

আরো পড়ুন  


Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531