ঢাকা,  মঙ্গলবার
২২ অক্টোবর ২০২৪

Advertisement
Advertisement

বেরিয়ে এলো ভুয়া নাম ও এনআইডি দিয়ে ৩৫ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য

প্রকাশিত: ১৭:২৪, ২৬ আগস্ট ২০২৩

আপডেট: ১০:০২, ২৭ আগস্ট ২০২৩

বেরিয়ে এলো ভুয়া নাম ও এনআইডি দিয়ে ৩৫ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য

২০২০ সালে ক্লাসিফায়েড লোন বা 'ওয়োর্স্ট-পারফর্মিং লোন' বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নিয়মিত তদন্তে কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়ে। অনেক তদন্তের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক শেষ পর্যন্ত জানতে পারে  কামরুজ্জামান সাইদী নামে এক ব্যবসায়ী ভুয়া নাম ও এনআইডি  ব্যবহার করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক অগ্রণী ও রূপালী থেকে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন।

পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপে কামরুজ্জামান সম্প্রতি রূপালী ব্যাংকের প্রায় ২ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করেছেন। তবে আর্থিক চাপ কমাতে তার ঋণের ওপর সুদ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মওকুফ করার পরেও  অগ্রণী ব্যাংকের এখন বকেয়া রয়েছে ৩২.৫ কোটি টাকার ঋণ।

যেভাবে নেওয়া হয় এ ঋণ

২০১৫ সালে রূপালী ব্যাংক থেকে এস ট্রেডিংয়ের নামে ৫৫ লাখ টাকা ঋণ নেন তিনি। কিন্তু প্রায় পাঁচ বছর ধরে কিস্তি পরিশোধ করা হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঋণের এনআইডি নম্বরটি ভুয়া। এরপর  এনআইডি কার্ডের সূত্র ধরে কামরুজ্জামান সোহাগ নাম ব্যবহার করে তদন্ত শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডাটাবেজে এই নামের কাছাকাছি 'কামরুজ্জামান সাইদী' নামের একজনের তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। এ নামের সাথে যুক্ত এনআইডি নম্বর ছিল আলাদা, এই ব্যক্তির বাবা-মার নামও ছিল ভিন্ন। এমনকি ব্যক্তির ঠিকানাও ছিল ভিন্ন।

আরও পড়ুন: দাম বাড়বে আতপ চালের, ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করল ভারত

তদন্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেখতে পায়, কামরুজ্জামান সাইদী নামের এই ব্যক্তি ২০১৮ সালের নভেম্বরে অগ্রণী ব্যাংক থেকে একই রকমভাবে ৫৫ লাখ টাকার ঋণ নেন। এবার বিশাল বাংলাদেশ নামে একটি কোম্পানির অধীনে ঋণটি নেওয়া হয়। এখানেই শেষ নয়। তদন্তে বেরিয়ে আসে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য।

তদন্ত চলাকালীন সময়েও এই একই ব্যক্তি ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংক থেকে আরও ঋণ নিয়েছেন। এসব ঋণ ভাস্ট অ্যাপারেলস, জারিফ ইন্টারন্যাশনাল, আইসিএল-ম্যাক জেভি এবং আইসিএল-সিডিসি জেভি কোম্পানির নামে নেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অগ্রণী ব্যাংকে তার ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২.৫ কোটি টাকা।

এমনকি যে বন্ধকি জমি দেখিয়ে ঋণ নেয়া হয় তার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। রিপোর্টে বলা হয়, সাধারণত একজন ব্যক্তির একাধিক ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) আইডি তৈরি করা সম্ভব নয়।

দেশের ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান দ্বারা সরবরাহকৃত ক্রেডিট-সম্পর্কিত তথ্যের আপডেটেড ডাটাবেজ সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের হলেও, কামরুজ্জামান সাইদীর একই নামে দুটি ভিন্ন সিআইবি আইডি ছিল।

দুটি সিআইবি আইডিতে একই করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) দেওয়া ছিল, কিন্তু ব্যবহার করা হয় ভিন্ন এনআইডি নম্বর। আবার এ দুটি এনআইডি'র মধ্যে একটি ছিল ওই ব্যক্তিরই টিআইএন নম্বরের নকল। টিআইএন নম্বরটির শেষে কেবল একটি শূন্য যোগ করে সেটিকে এনআইডি নম্বর হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, কামরুজ্জামান ২০২০ সালের নভেম্বরে রূপালী ব্যাংকে তার আসল এনআইডি দেন। তার এন্টারপ্রাইজ ফাইভ এস ট্রেডিং বর্তমানে নিষ্ক্রিয়। ব্যাংকটির কাছে কোম্পানিটির ঋণের পরিমাণ ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। অগ্রণী ব্যাংকও এ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত করে কামরুজ্জামানকে এসব ঋণ পেতে সহায়তাকারী ব্যাংক কর্মকর্তার সন্ধান পায়।

অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুর্শেদুল কবির বলেন, ইতোমধ্যেই এই ঘটনার সাথে জড়িত একজন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের জিরো-টলারেন্স নীতি। গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকজন খেলাপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঋণ দেওয়ার ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে কেউ ব্যাংকে অনিয়ম করে পার পাবে না।

কামরুজ্জামান সাইদী কে

কামরুজ্জামান সাইদী ওরফে কামরুজ্জামান সোহাগ তৈরি পোশাক খাতের একজন ব্যবসায়ী এবং বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সদস্য।

তবে কামরুজ্জামান অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।  অভিযোগগুলোকে তাকে ব্ল্যাকমেইল করার ষড়যন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করেন তিনি।

Advertisement
Advertisement

Warning: Undefined variable $sAddThis in /mnt/volume_sgp1_05/dikdorshon/public_html/details.php on line 531