
ইরান ও ইসরায়েল
ইরানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইসরায়েলের স্পর্শকাতর ও গোপন তথ্যের একটি বিপুল ভাণ্ডার সংগ্রহ করেছে বলে দাবি করেছে তেহরানের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম। এসব তথ্যের মধ্যে ইসরায়েলের পারমাণবিক স্থাপনা ও কর্মসূচি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাত্ত রয়েছে বলে শনিবার প্রেসটিভি এক প্রতিবেদনে জানায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিযানটি কিছুদিন আগে পরিচালিত হলেও গোপনীয়তা রক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে খবরটি এতদিন প্রকাশ করা হয়নি। কারণ বিশাল এই তথ্যভাণ্ডার সুরক্ষিতভাবে ইরানে পৌঁছে দেওয়া এবং সেগুলোর বিশ্লেষণ শেষ করতেই লেগেছে উল্লেখযোগ্য সময়।
তবে এ পর্যন্ত ইরানি মিডিয়া এসব তথ্যে কী রয়েছে বা কীভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ করেনি। প্রেসটিভি বলছে, নথিগুলো এতটাই বিশাল ও বিস্তারিত যে ছবি ও ভিডিওসহ সবকিছু বিশ্লেষণে সময় লেগেছে। এ বিষয়ে ইসরায়েল এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
পূর্ববর্তী প্রেক্ষাপট
এই ঘটনার পেছনে ইসরায়েলের পারমাণবিক তথ্য ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার গভীরতা নতুন করে আলোচনায় এসেছে। ২০২৩ সালে ইসরায়েলের একটি পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রে সাইবার হামলার ঘটনা ঘটেছিল বলে খবর ছড়িয়েছিল। তখনো ইরানের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়। এবার ইরানের দাবি করা তথ্য হস্তগতকরণের ঘটনায় সেই সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছিলেন, তাদের গোয়েন্দারা ইরানের গোপন পারমাণবিক তথ্যের বিশাল আর্কাইভ উদ্ধার করেছে, যা ইরানের প্রকৃত পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কে বিশ্ববাসীর ধারণা বদলে দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ও সাম্প্রতিক উত্তেজনা
ইরান-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনাও এই পটভূমিতে নতুন মাত্রা পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগে তেহরানকে হুমকি দিয়েছিলেন, পারমাণবিক সমঝোতায় না এলে সামরিক হামলা হবে। যদিও এপ্রিলে ইরানে হামলার একটি পরিকল্পনা শেষ মুহূর্তে ট্রাম্প নিজেই আটকে দেন, আলোচনার পথ উন্মুক্ত রাখতে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি সম্প্রতি বলেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পরিত্যাগ করা ইরানের স্বার্থের ‘শতভাগ বিপরীত’। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রধান দাবি স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। বর্তমানে ওমানের মধ্যস্থতায় পরোক্ষ আলোচনায় রয়েছে ওয়াশিংটন ও তেহরান, যদিও তা এখনো সুনির্দিষ্ট সমঝোতায় পৌঁছায়নি।
বিশ্লেষণ
এই তথাকথিত “নথি হস্তগতকরণ” নতুন এক স্নায়ুযুদ্ধের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যেখানে তথ্য ও সাইবার নিরাপত্তা অস্ত্র হয়ে উঠেছে। ইরান যদি সত্যিই ইসরায়েলের পারমাণবিক গোপন তথ্য হাতে পেয়ে থাকে, তবে তা শুধু কূটনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, সামরিক কৌশলেও বড় ধরনের পরিবর্তন ডেকে আনতে পারে।
এ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক মহল পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, কারণ এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।