
আইএমএফ
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে ডলারের বিনিময় হারে আরও নমনীয়তা আনতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনে বর্তমানে চালু ‘ক্রলিং পেগ’ ব্যবস্থার করিডোর বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পথে। এর ফলে আইএমএফের আটকে থাকা ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের সম্ভাবনা জোরালো হয়েছে।
বর্তমানে চালু ক্রলিং পেগ ব্যবস্থায় ডলারের মধ্যবর্তী বিনিময় হার ১১৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে এই দরের সঙ্গে ব্যাংকগুলো আড়াই শতাংশ বেশি বা কমাতে পারত। কিন্তু নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, এই সীমা বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। অর্থাৎ, ব্যাংকগুলো এখন ১১৯ টাকার সঙ্গে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ কম-বেশি হারে ডলার বেচাকেনা করতে পারবে, যা একটি বাস্তবভিত্তিক এবং বাজারভিত্তিক বিনিময় হারের পথ খুলে দিচ্ছে।
এই পদক্ষেপ আইএমএফের মূল দুটি শর্ত পূরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর আগে সংস্থাটি বারবার দাবি করে আসছিল, ডলারের বিনিময়হারে আরও নমনীয়তা এবং রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া তারা ঋণের পরবর্তী কিস্তি ছাড় করবে না।
রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে অগ্রগতির অংশ হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পুনর্গঠন করা হয়েছে। এনবিআরকে বিলুপ্ত করে পৃথক দুটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে—একটি কর আদায়ের জন্য এবং অন্যটি শুল্ক ব্যবস্থাপনার জন্য। এই উদ্যোগকে রাজস্ব খাতে কাঠামোগত সংস্কার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ২০২৩ সালে আইএমএফের কাছ থেকে মোট ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ প্যাকেজ অনুমোদন পায়, যার মধ্যে প্রথম তিন কিস্তি ছাড় হলেও চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি আটকে ছিল মূলত বিনিময় হার ও রাজস্ব আদায় বিষয়ে অগ্রগতির অভাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের মধ্যেই এই বিনিময় হার সংশোধনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। বাজারভিত্তিক দরের দিকে যাওয়া এবং নমনীয় নীতিতে আগানো দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনরুদ্ধার এবং বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
এই নীতিগত পরিবর্তনের ফলে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যদিও আমদানি ব্যয় কিছুটা বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে সামগ্রিকভাবে এটি অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ বলেই বিশ্লেষকদের অভিমত।