ইসফাহান
মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরায়েল শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দিবাগত রাতে ইরানে প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় প্রদেশ ইসফাহান অঞ্চলে এই হামলা হয়। হামলার মাত্রা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে একেক রকম দাবি করা হচ্ছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, হামলায় তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আর কোনো ক্ষেপণাস্ত্র নয়, ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে তেহরান।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা চলছে। গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ইসরায়েলের হামলায় বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সিনিয়র কমান্ডারসহ বেশ কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন। এ হামলার জন্য ইরান ইসরায়েলকে দায়ী করে। পরে সেই আক্রমণের জবাবে ইসরায়েলের ভূমিতে তিনশর বেশি ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালিয়েছে তেহরান। তারই জবাবে আজ ইসরায়েলের এ আক্রমণ।
কিন্তু হামলার জন্য ইসরায়েল ইসফাহানকে কেন বেছে নিল, চলুন এখনও পর্যন্ত সর্বশেষ ঘটনা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ইরানের সংবাদমাধ্যম ও কর্মকর্তারা নিশ্চিত করে বলেছেন, এই হামলায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এ আক্রমণে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ইরানের বার্তা সংস্থা ফারস জানিয়েছে, একটি সেনা ঘাঁটির কাছে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে।
একটি রাষ্ট্রীয় মিডিয়া চ্যানেল ইসফাহানের একজন জেনারেলের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, 'সন্দেহজনক বস্তুকে লক্ষ্য করে বিমান প্রতিরক্ষা গুলি চালানোর কারণে' ওই এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানায় চ্যানেলটি।
ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কর্পসের সামরিক শাখার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম ইসফাহানের একটি পারমাণবিক স্থাপনার একটি ভিডিও পোস্ট করেছে। ওই ভিডিওতে স্থাপনাটির কোনো ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার চিহ্ন দেখা যায়নি।
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা সংস্থা নিশ্চিত করেছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার কোনো ক্ষতি হয়নি।
আক্রমণের পরপরই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বাণিজ্যিক ফ্লাইট চলাচল স্থগিত করেছিল ইরান। তবে এখন সেই স্থগিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইরাক ও সিরিয়াতেও ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সক্রিয় থাকার অঞ্চলে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। তবে ওইসব বিস্ফোরণের সঙ্গে ইসফাহান হামলার সরাসরি সম্পর্ক আছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
ইসফাহানকে কেন টার্গেট করা হলো?
ইরানের কেন্দ্রস্থলে ইসফাহান প্রদেশ অবস্থিত। এ প্রদেশের নাম রাখা হয়েছে এর বৃহত্তম শহরের নামানুসারে। এ অঞ্চলে একটি বড় বিমানঘাঁটি, একটি বড় ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কমপ্লেক্স এবং বেশ কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনাসহ উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ইরানি সামরিক অবকাঠামো রয়েছে।
ইরান ইসরায়েলে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছোড়ার এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে এই পাল্টা হামলা চালানো হয়েছে। এতে দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে।
ব্যাপক পরিসরে আক্রমণ চালালেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অন্য মিত্রদের সহায়তায় ইরানের বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ঠেকিয়ে দেয় ইসরায়েলি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
সর্বশেষ এই হামলার সম্পূর্ণ তাৎপর্য এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট হয়নি। ইরান প্রতিক্রিয়া জানাবে কি না, তা-ও এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এই হামলাকে বিবিসির নিরাপত্তা সংবাদদাতা ফ্রাঙ্ক গার্ডেনার 'সীমিত, প্রায় প্রতীকী' বলে অভিহিত করেছেন। তার মতে, সংঘাত যেন আর না এগোয়, তা নিশ্চিত করার জন্য সেভাবেই হামলা চালানো হয়েছে।