ঢাকা,  মঙ্গলবার
১৬ এপ্রিল ২০২৪

Advertisement
Advertisement

ইফতারে কী খাবেন আর কী খাবেন না

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:৩১, ২৬ মার্চ ২০২৩

ইফতারে কী খাবেন আর কী খাবেন না

গরমের এই সময় রোজা রেখে সুস্থ থাকাটা বেশ চ্যালেঞ্জের বিষয়। আবহাওয়ার ওপর কারও হাত না থাকলেও খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে এই কঠিন সময়ে আপনি পেতে পারেন স্বস্তি ও প্রশান্তি। 

রোজায় দীর্ঘ সময় পর ইফতার করতে হয় বলে খাবারটা হতে হবে সহজ ও সুপাচ্য। অতিরিক্ত তেল ও মসলাযুক্ত খাবার না খাওয়াই উচিত। এগুলো খেলে ওজন তো বাড়বেই সেই সঙ্গে পেটের সমস্যা, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, অবসাদ, আলসার, অ্যাসিডিটি এবং হজমের সমস্যা হতে পারে। তাই আপনাকে জেনে নিতে হবে ইফতারে কী খাবেন আর কী খাবেন না।  

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুস্থ থাকতে ক্ষতিকর খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। ইফতারে ভাজা-পোড়া বাদ দিয়ে ফলমূলে মনোযোগী হওয়া উচিত। তাই রমজানজুড়ে পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হচ্ছে ইফতার-সাহরির ইফতার ও সাহরিতে পুষ্টিকর খাদ্যতালিকা।

ইফতারের সময় একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, ভরপেট খাবেন না, পেটের এক-চতুর্থাংশ খালি রাখবেন। পানি ১-২ ঢোক পান করার পর এক গ্লাস ঘরে বানানো ফলের শরবত খেলে শরীর সতেজ হতে শুরু করবে। 

খেজুর বা খোরমা দিয়ে ইফতার শুরু করবেন। ইফতারের পর থেকে সেহরির আগ পর্যন্ত অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি না খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে। তাই ইফতারের পর বেশি বেশি পানি পান করার চেষ্টা করুন। সবজি ও ফল খাবেন। ইফতারে রাখবেন আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন, খনিজজাতীয় খাবার। 

আঁশযুক্ত খাবারের মধ্যে লাল আটা, বাদাম, বিনস, ছোলা, ডাল ইত্যাদি খেতে পারেন। কলা খাবেন। কারণ, একটি কলায় প্রায় ১০৫ ক্যালরি থাকে। রোজার শেষে শরীর, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুকোষ খাবারের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক শক্তির যে জোগান চায় কলা সেটি পূরণ করতে পারে। 

অতিরিক্ত তেল ও মসলাযুক্ত খাবার ছোলা ভুনা, পেঁয়াজু, বেগুনি, চপ, হালিম, বিরিয়ানি ইত্যাদি বাদ দিতে হবে। পাশাপাশি  চিনিযুক্ত খাবার খাবেন না। আর ইফতারের পর বেশি দুর্বল লাগলে ডাবের পানি বা স্যালাইন খেতে পারেন। 

কী খাবেন

একজন রোজাদার ইফতার ও সেহরিতে কি খাবেন তা নির্ভর করবে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা ও বয়সের উপর। সেহরি ও ইফতারে সহজে ও তাড়াতাড়ি হজম হয় এমন খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। সকল রোজাদারের জন্য ইফতারে খেজুর বা খুরমা, ঘরের তৈরি বিশুদ্ধ শরবত, কচি শসা, পেঁয়াজু, বুট এবং ফরমালিন মুক্ত মৌসুমি ফল থাকতে হবে। রুচি অনুযায়ী বাসার রান্না করা নুডুলস বা পাস্তা খেতে পারেন। প্রচুর সবুজ শাকসবজি, ফলমূল আহার করা উচিত।  

শরীর তরতাজা রাখতে বিভিন্ন ফলের শরবত, বাদাম, কলা ও খেজুরের স্মুদি, মাঠা, টক বা মিষ্টি দই খেতে পারেন। দই বা দই চিড়া খেতে পারেন। এতে সারাদিন অভুক্ত পেটে ঠান্ডা কিছু হজমক্রিয়া সচল রাখবে। এ ছাড়া অ্যাসিডিটি নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করবে। প্রতি ১০০ গ্রাম দইয়ে শক্তি থাকে ২৫৭ ক্যালরি। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে জুস কিংবা দুধের সঙ্গে ইসুবগুল খেতে পারেন। আর খেজুর তো থাকবেই।

প্রতিদিন একটি করে ডিম খাদ্য তালিকায় রাখা যেতে পারে। যাদের দুধ খাওয়ার অভ্যাস আছে তারা সেহরির পর এক গ্লাস দুধ খেতে পারেন। খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে ধীরে ধীরে খেতে হবে যা হজমে সহায়ক হবে।

ইফতার ও সেহরি সময়ের মধ্যে অন্তত পক্ষে আট থেকে দশ গ্লাস পানি পান করতে হবে। তবে একবারে নয়, থেমে থেমে। এশা ও তারাবির নামাজের পর অভ্যাস অনুযায়ী পরিমাণ মতো ভাত, মাছ অথবা মুরগির মাংস, ডাল ও সবজি খাওয়া যাবে। সেহরিতে ভাতের সঙ্গে মিশ্র সবজি, মাছ অথবা মাংস খাওয়া যাবে। এ ছাড়া টক দই, লাল চিড়া, যেকোনো মৌসুমি ফল একসঙ্গে ব্লেন্ড করে খেলে উপকার পাবেন। 

বিভিন্ন মৌসুমি সবজির সঙ্গে মুরগির মাংস মিশিয়েও চিকেন স্যুপ তৈরি করা যায়। একদিনের ইফতারে দুধ, ফল, সাগুদানা ও সুজি দিয়ে ফালুদা বানাতে পারেন। দুধ ও ডিম দিয়েও পুডিং বানাতে পারেন। কেউ চাইলে ইফতারে রুটি বা ভাত, ডাল, সবজি, মাছ-মাংস বা ডিম ইত্যাদি রাখতে পারেন।

ইফতারে ভাজা পোড়া না রেখে রাখতে পারেন কাঁচা ছোলা। কারণ ২৫-৩০ গ্রাম ছোলায় প্রায় ১০০ ক্যালরি থাকে। কিন্তু ফ্যাট থাকে মাত্র ৫ গ্রাম, যা কি না রক্তের চর্বি কমায়। তাই সামান্য পরিমাণ খেয়ে নিলেই অনেক শক্তি পাওয়া যায়। আবার কাঁচা ছোলা পেঁয়াজ, কাচামরিচ, শসা, টমেটো আর অল্প সরিষার তেল দিয়েও মাখিয়ে নিতে পারেন। দারূণ সুস্বাদু এই খাবারটি আপনাকে মুহূর্তেই সতেজ করে তুলবে। 

সহজলভ্যতা অনুযায়ী ৩ থেকে ৪ রকমের ফল যেমন পেয়ারা, আপেল, তরমুজ থাকা উচিত। প্রতি ১০০ গ্রাম হিসেবে এদের রয়েছে যথাক্রমে ৬৮, ৪৫ ও ৩০ ক্যালরি। শাক সবজির ক্ষেত্রেও রান্না ও সেদ্ধ মিলিয়ে খাওয়া উচিত। 

এ ছাড়া শাক-সবজি আর ফল মিলিয়ে পছন্দের কোনো সালাদ তৈরি করে নিতে পারেন স্বাদ অনুযায়ী। রঙিন ফলগুলো ইফতার আয়োজনে ফলের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি বিভিন্ন রং মানুষের ক্ষুধা, আকষর্ণ এবং মনকেও ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। তবে ফল এভাবে খাওয়ার সুযোগ না থাকলে জুস করেও খেতে পারেন। বিশেষ করে, কলা, বাঙ্গি, পেঁপে কিংবা আনারস।

খাবারে যাতে প্রোটিনের ঘাটতি না হয় সেজন্য ইফতার বা সেহরিতে চর্বিযুক্ত মাছ, চামড়াসহ মুরগির তরকারিও খেতে পারেন। যাদের গরুর মাংসে বিধিনিষেধ নেই তারা চর্বিযুক্ত গরুর মাংস খেতে পারেন। তবে প্রতিবেলা মাংস না খেয়ে একবেলা মাছ খেতে চেষ্টা করুন।

কী খাবেন না 

ইফতারে কখনোই বাইরের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের তেলে ভাজা খাবার রাখা যাবে না। ঘরেও ডুবো তেলে ভাজা অর্থাৎ ট্রান্সফ্যাট জাতীয় কোনো খাবার ইফতারির তালিকায় রাখা যাবে না। এ ছাড়া বেশি মসলা, মিষ্টি এবং লবণযুক্ত খাবার এ সময়ে বাদ দিতে হবে।

এনার্জি ড্রিংক, কার্বনেটেড ড্রিংক এবং সোডা জাতীয় পানীয় এগুলো এসিডিটি বাড়িয়ে দেয়। পারতপক্ষে বাইরের দোকানের তৈরি ইফতার না খাওয়াই ভালো। তেহারি বা হালিম না খাওয়াই ভালো। কারণ এতে বদহজম হতে পারে। অনেকেই সেহরিতে খেতে চান না। শুধু পানি খেয়ে রোজা রাখেন কিন্তু কখনোই শুধু পানি খেয়ে রোজা রাখা যাবে না। অধিক তেল, অধিক ঝাল, অধিক চর্বি জাতীয় খাবার সেহরিতে খাওয়া একদম উচিত নয়। সুগার ড্রিংক, চা ও কফি যতটা সম্ভব কম পান করতে হবে। রান্নার সময় খাবারে ডালডার পরিবর্তে সয়াবিন তেল ব্যবহার করতে হবে তবে যতটা সম্ভব কম পরিমাণে। অতিরিক্ত লবণ ও লবণাক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। 

রমজানের পরিশুদ্ধি কেবল ধর্মপালনেই নয় বরং জীবনাচরণেও। আর রমজানে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মেলবন্ধনে প্রয়োজন পূর্ব প্রস্তুতি। তাই আগে থেকেই এসব ভেবে মনকেও প্রস্তুত রাখলে, মাহে রমজানের পুরো মাসটাই সহজ এবং সুন্দর হবে আশা করা যেতে পারে।

এসএস

Advertisement
Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_05/p1kq0rsou/public_html/details.php on line 531