
ট্রাম্প-নেতানিয়াহু
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান ও তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপের পটভূমিতে মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, গাজা যুদ্ধ দ্রুত শেষ না করলে ইসরায়েলকে পরিত্যাগ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র, এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। সূত্র হিসেবে পত্রিকাটি উল্লেখ করে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা এই বার্তা দিয়েছেন।
কিন্তু টাইমস অব ইসরায়েলসহ একাধিক ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম এ নিয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করেছে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে কিছু নীতিগত মতপার্থক্য থাকলেও “যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে ত্যাগ করবে” — এমন কোনো বাস্তবতা নেই। বরং, দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা, কূটনীতি ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আগের মতোই অব্যাহত আছে।
টাইমস অব ইসরায়েল একজন মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, “ওয়াশিংটন পোস্টে যা বলা হয়েছে, তা অতিরঞ্জিত ও বিভ্রান্তিকর। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান হলো, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে আমরা সমর্থন করি, যদিও কিছু কৌশলগত দিক নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে।”
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রও ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনের সত্যতা অস্বীকার করেছে। তাদের মতে, এই ধরনের প্রতিবেদন “উদ্দেশ্যমূলকভাবে আন্তর্জাতিক সহানুভূতি ঘাটাতে এবং বিভ্রান্তি ছড়াতে তৈরি করা হয়ে থাকতে পারে।”
পটভূমি: আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে
অন্যদিকে, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ফ্রান্সসহ একাধিক মিত্র দেশ প্রকাশ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ না করলে এবং মানবিক ত্রাণ প্রবেশে বাধা সরিয়ে না নিলে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে এসব দেশ। এই বিষয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “৭ অক্টোবরের হামলাকারীদের পুরস্কৃত করে লন্ডন, অটোয়া ও প্যারিস ভবিষ্যতের নৃশংসতার পথ খুলে দিচ্ছে।”
ট্রাম্পের অবস্থান: গাজা যুদ্ধের ইতি চান?
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর, এডান আলেকজান্ডারের মুক্তি এবং গাজায় দুর্ভিক্ষের বিষয়ে তার বক্তব্য ঘিরেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নানা প্রশ্ন তুলছেন। হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও গাজা যুদ্ধের অবসান চান। তবে মার্কিন প্রশাসনের ভেতরের কৌশলগত অবস্থান এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন যেমন ইসরায়েল-মার্কিন সম্পর্কের টানাপড়েনের ইঙ্গিত দেয়, তেমনি ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোর পাল্টা প্রতিবেদন এই সম্পর্কের স্থায়িত্ব ও কৌশলগত গভীরতা তুলে ধরে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির এই নাটকীয় মঞ্চে কোন তথ্য সত্য, কোনটি বিভ্রান্তিকর — তা সময়ই বলে দেবে। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, গাজা যুদ্ধ শুধু সামরিক নয়, কূটনৈতিক যুদ্ধেও পরিণত হয়েছে।