ভারতীয় পণ্য বর্জন
বাংলাদেশে সামাজিক মাধ্যমে ভারতীয় পণ্য বর্জনের প্রচারণা চলছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। এবার এই প্রচারণায় সংহতি প্রকাশ করেছে দেশটির অন্যতম বিরোধী দল বিএনপি। সম্প্রতি দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল করিব রিজভী এই সংহতি প্রকাশ করেন। এরপরই প্রশ্ন উঠেছে বিএনপি দলীয়ভাবেই 'ভারতীয় পণ্য বর্জন' প্রচারণায় জড়িয়ে পড়ল কি না।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভারত আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে পেছন থেকে কলকাঠি নেড়েছে। আর তার জন্যই বিএনপির ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে চীনের পরে ভারত থেকেই সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি হয়ে থাকে, যা মোট আমদানির প্রায় বিশ শতাংশ। এর মধ্যে পেঁয়াজের মতো জরুরি অনেক নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য ভারতের ওপর নির্ভরতা আছে বাংলাদেশের আমদানিকারকদের।
বিএনপির রাজনীতিতে ভারত বিরোধিতার ইতিহাস আছে আগে থেকেই। কখনো কখনো ভারতীয় নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে দলটির সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা দেখা গেলেও অনেক ক্ষেত্রেই সম্পর্কের অবনতি হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
দ্বাদশ নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের চাপ উপেক্ষা করে বিএনপিকে ছাড়াই আওয়ামী লীগ করতে পারার পেছনে ভারতীয় সমর্থন ছিল এটা অনেকেই মনে করে।
২০১৪ সালের মে মাসে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি ভারতের ক্ষমতায় আসার পর থেকে নানা ঘটনায় বিএনপির নেতাদের মধ্যে এই ধারণাই বদ্ধমূল হয়েছে যে ভারত বাংলাদেশে শুধু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে স্বস্তিবোধ করছে।
বাংলাদেশে গত কিছুদিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে ভারতীয় পণ্য বর্জনের পক্ষে ক্যাম্পেইন করছিলো সরকার বিরোধী নানা গ্রুপ ও ব্যক্তি। বিএনপির সাথে আন্দোলনে থাকা কয়েকটি দলের ব্যানারেও এমন ক্যাম্পেইন পরিচালিত হতে দেখা গেছে ঢাকায়।
বিবিসি বাংলাকে রিজভী বলেন বাংলাদেশে গত নির্বাচনে ভারতের ভূমিকার কারণে ভারতীয় পণ্য বর্জনের পক্ষে যে সামাজিক আন্দোলন তৈরি হয়েছে তাতেই সংহতি প্রকাশ করেছেন তিনি।
কিন্তু এটি বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্ত বা অবস্থান কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয় নয়। এটি গত নির্বাচনে ভারতীয় নীতি নির্ধারক ও কূটনীতিকরা যেভাবে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থা নিয়ে তার বিরুদ্ধে একটি সামাজিক প্রতিবাদে অংশ নেওয়া।
বুধবার নিজের গায়ের চাদর ফেলে দিয়ে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশের পাশাপাশি দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, তাদের আপত্তি ভারতীয় শাসকদের পলিসি বা নীতি নিয়ে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন বলছেন নির্বাচনের সময় থেকেই বিএনপি ধরেই নিয়েছে যে ভারতীয় নীতি নির্ধারকরা আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিচ্ছে।
এ কারণেই তারা এখন ভারতীয় পণ্য বর্জনে সংহতির মাধ্যমে পাবলিক সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগাতে চাইছে। এটি হয়তো তাদের জন্য একটি টেস্ট কেসও হতে পারে। তারা হয়তো দেখতে চায় জনগণ কীভাবে নেয় আর ভারতই বা কেমন রেসপন্স করে।