ঢাকা,  শুক্রবার
০২ জুন ২০২৩

Advertisement

তীব্র তাপদাহে পশুপাখির প্রতি সদয়সহ ৭ আমল

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

প্রকাশিত: ১৬:০১, ১৩ মে ২০২৩

তীব্র তাপদাহে পশুপাখির প্রতি সদয়সহ ৭ আমল

ফটো কোলাজ: দিনদর্পন

তাপদাহে তীব্র গরমে দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। গরমের তীব্রতার কারণে বাইরে বের হওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক শিশু সর্দিজ্বর ও ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। তীব্র গরমে প্রবীণরাও অসুস্থ হচ্ছেন। পরিস্থিতি এতই খারাপ যে ইবাদত-বন্দেগি করতে মানুষের কষ্ট হচ্ছে। পশুপাখির অবস্থা আরও করুণ; পানির সংকটে পড়েছে। এই কঠিন সময়ে মহান আল্লাহর রহমত পাওয়ার আশায় এবং অফুরন্ত সওয়াব লাভের জন্য কিছু আমল করা যেতে পারে। এতে আল্লাহ তাআলার দয়ায় পরিস্থিতি অনুকূলে আসার আশা করা যায়।

প্রচণ্ড গরমের এই সময় সাতটি আমল করা যেতে পারে

পানি পান করানো
গরমে বেশির ভাগ মানুষ অস্থির হয়ে পড়ে। তাই অফিস, দোকান কিংবা বাসা যেখানেই হোক, বাইরে থেকে কেউ এলেই তাকে এক গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করানোর মাধ্যমে অফুরন্ত সওয়াব লাভ করা যেতে পারে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, সাদ ইবনে উবাদা (রা.) বলেন, (এক দিন) আমি (নবীজিকে) বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কোন সদকা উত্তম? তিনি বলেন, পানি পান করানো। (নাসায়ি, হাদিস : ৩৬৬৫)
আর কেউ পানি চাইলে তা দেওয়ার সামর্থ্য থাকলে কোনোভাবেই নিষেধ না করা। নবীজি (সা.) কেউ পানি চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানাতে বারণ করেছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আয়েশা (রা.) বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এমন কী জিনিস আছে, যা সংগ্রহে বাধা দেওয়া হালাল নয়? তিনি বলেন, পানি, লবণ ও আগুন।

কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে সেবা করা
অনেক সময় দেখা যায়, অতিরিক্ত গরমে অনেক মানুষ হঠাত্ অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন তাদের সেবা করে, তাদের নিরাপদে বাসা বা হাসপাতালে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যেতে পারে। সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলমান তার কোনো (অসুস্থ) মুসলিম ভাইকে দেখতে গেলে সে (যতক্ষণ সেখানে থাকে ততক্ষণ) যেন জান্নাতের ফল আহরণ করতে থাকে। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৬৭)

আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, কেউ উত্তমরূপে অজু করে নেকির আশায় তার কোনো (অসুস্থ) মুসলিম ভাইকে দেখতে গেলে তাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর খরিফ (সত্তর বছরের) পথ দূরে রাখা হবে। আমি (সাবিত আল-বানানী) আবু হামজাহকে জিজ্ঞেস করি, খরিফ শব্দের তাত্পর্য কী? তিনি বলেন, বছর। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩০৯৭)

ইবাদতে অবহেলা না করা
গরমের কারণে ইবাদতে অবহেলা না করা। কারণ জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার গরমের চেয়ে বহুগুণে উত্তপ্ত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, “পেছনে থাকা লোকগুলো আল্লাহর রাসুলের বিপক্ষে বসে থাকতে পেরে খুশি হলো, আর তারা অপছন্দ করল তাদের মাল ও জান নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে এবং তারা বলল, ‘তোমরা গরমের মধ্যে বের হয়ো না’। বলো, জাহান্নামের আগুন অধিকতর গরম, যদি তারা বুঝত।” (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৮১)

জোহরের নামাজ দেরিতে পড়া
নবীজি (সা.) প্রচণ্ড গরমের দিনে জোহরের নামাজ কিছুটা বিলম্বে পড়ার অনুমতি দিয়েছেন, যাতে গরমের তীব্রতা কমলে মুসল্লিরা সহজে মসজিদে আসতে পারে। আবু হুরায়রা (রা.) ও আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন গরমের প্রচণ্ডতা বৃদ্ধি পায়, তখন গরম কমলে সালাত আদায় করবে। কেননা, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের নিঃশ্বাসের অংশ। (বুখারি, হাদিস : ৫৩৩)

আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া
মানুষের পাপাচারই মানুষের ওপর বিপদাপদ ডেকে আনে, তাই প্রতিকূল পরিস্থিতিকে অনুকূল বানাতে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিকল্প নেই। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ নিজেই বলেছেন, ‘আর বলেছি, তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা।’ (সুরা : নুহ, আয়াত : ১০-১২)

পশু-পাখির প্রতি সদয় হওয়া
মানুষের পাশাপাশি গরমে পশুপাখিও অস্থির হয়ে পড়ে। আমাদের উচিত পশুপাখির প্রতি সদয় হওয়া। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) বলেন, এক ব্যভিচারিণীকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। সে একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন সে দেখতে পেল কুকুরটি একটি কূপের পাশে বসে হাঁপাচ্ছে। বর্ণনাকারী বলেন, পানির পিপাসা এটাকে মুমূর্ষ করে দিয়েছিল। তখন সেই নারী তার মোজা খুলে ওড়নার সঙ্গে বাঁধল। অতঃপর সে কূপ হতে পানি তুলল (এবং কুকুরটিকে পানি পান করালো), এ কারণে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো। (বুখারির ৩৩২১ নম্বর হাদিস)

Advertisement
Advertisement