সমুদ্রের পানি থেকে সরাসরি হাইড্রোজেন তৈরির একটি সস্তা, জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং কার্যকর উপায় উদ্ভাবন করেছেন রয়্যাল মেলবোর্ন ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (আরএমআইটি) গবেষকরা। এ পদ্ধতি সবুজ হাইড্রোজেন শিল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।
নতুন এ গবেষণায় আবিষ্কৃতি পদ্ধতিতে সমুদ্রের পানি থেকে সরাসরি হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনকে আলাদা করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় পানিকে লবণমুক্ত করার প্রয়োজন হয় না। পাশাপাশি কার্বন নির্গমন হয় না। গবেষণাটি উইলি জার্নাল, স্মল-এ প্রকাশিত হয়েছে।
হাইড্রোজেন দীর্ঘকাল ধরে একটি ভবিষ্যৎ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি হিসেবে স্বীকৃত। বিমান ও জাহাজ শিল্পকে কার্বনমুক্ত করার সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে এই হাইড্রোজেনকে বিবেচনা করা হয়। এর কারণ, দুই ধরনের যানবাহনে এত বেশি শক্তির প্রয়োজন, যা নবায়নযোগ্য অন্য কোনো শক্তি দিয়েই পূরণ করার কথা কেউ ভাবতে পারেন না।
বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব হাইড্রোজেনই প্রাকৃতিক গ্যাস (হাইড্রোকার্বন) থেকে উৎপাদিত। গ্যাস থেকে হাইড্রোজেন আলাদা করার জন্য বছরে প্রায় ৮৩০ মিলিয়ন মেট্রিক টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন ঘটে, যা যুক্তরাজ্য ও ইন্দোনেশিয়ার সম্মিলিত বার্ষিক নির্গমনের সমতুল্য।
কার্বন নির্গমনমুক্ত সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদন করা হয় পানিতে তড়িৎ বিশ্লেষক (ইলেক্ট্রোলাইজার) ব্যবহার করে। এই প্রক্রিয়ায় পানিকে ভেঙে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনকে আলাদা করা হয়। তবে এ পদ্ধতি খুবই ব্যয়বহুল, যা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারযোগ্য নয়। বিশ্বব্যাপী মোট হাইড্রোজেনের মাত্র ১ শতাংশ এই পরিবেশবান্ধব উপায়ে উৎপাদন করা হয়।
এ বিষয়ে আরএমআইটির ভাইস চ্যান্সেলরের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো প্রধান গবেষক ড. নাসির মাহমুদ বলেন, সবুজ হাইড্রোজেন উত্পাদন প্রক্রিয়াটি খুবই ব্যয়বহুল এবং তা বিশুদ্ধ পানির ওপর নির্ভরশীল।
একটি পরিচ্ছন্ন জ্বালানির উৎস হিসেবে হাইড্রোজেনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে এমন অনেক শিল্প রয়েছে, যেগুলোতে সহজেই নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করা যায় না।
নাসির মাহমুদ আরও বলেন, সমুদ্রের পানি থেকে হাইড্রোজেন তৈরির পদ্ধতিটি বর্তমানে বাজারে থাকা যেকোনো সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদন পদ্ধতির তুলনায় সহজ এবং অনেক বেশি সাশ্রয়ী। আমরা আশা করি এটি অস্ট্রেলিয়ায় সমৃদ্ধ সবুজ হাইড্রোজেন শিল্পপ্রতিষ্ঠাকে এগিয়ে নেবে।