ঢাকা,  শুক্রবার
০৯ মে ২০২৫

Advertisement
Advertisement

আলু রপ্তানিতে ফের সুবাতাস

প্রকাশিত: ১৫:২১, ৮ মে ২০২৫

আলু রপ্তানিতে ফের সুবাতাস

আলুর বাজার

আলু উৎপাদনে বিশ্বে সপ্তম অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও রপ্তানিতে বাংলাদেশ এখনও শীর্ষ দশের বাইরে। অথচ চলতি বছর এই খাতে আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন দেখা গেছে। ২০২৫ সালের ৫ মে পর্যন্ত ৪৮ হাজার ১৭৭ টন আলু রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছর (২০২৪ সাল) রপ্তানিকৃত মোট ১২ হাজার ১১২ টনের চারগুণ। রপ্তানি মৌসুম এখনো শেষ হয়নি, ধারণা করা হচ্ছে মৌসুম শেষে এই পরিমাণ ৬০ হাজার টন ছাড়িয়ে যেতে পারে।

রপ্তানি বাড়ার পেছনে কারণ

রপ্তানিকারকরা বলছেন, দেশে আলুর উৎপাদন ভালো হওয়া, অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম কম থাকা, আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি এবং কিছু সরকারি সহায়তা রপ্তানিতে গতি এনেছে। বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার কারণে পাকিস্তান থেকে রপ্তানি কম হওয়ায় বাংলাদেশ সেই অর্ডারের সুবিধা পেয়েছে।
জিল ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হায়দার বলেন, “এবার রপ্তানি বাড়ার অন্যতম কারণ আলুর দাম কমে যাওয়া এবং আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের উত্তেজনার ফলে অনেক অর্ডার বাংলাদেশে এসেছে।”

বাংলাদেশ আলু রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি ফেরদৌসী বেগম জানান, মালয়েশিয়া ও নেপালে আগামী মাসগুলোতেও রপ্তানি চলবে। বিআইডিসির ‘সানসাইন’ জাতের আলু এ বছর প্রচুর রপ্তানি হচ্ছে, কারণ এর আকৃতি, রঙ ও গুণমান ভালো।

কম ভাড়া, বেশি মুনাফা

এবার জাহাজ ভাড়া কমে যাওয়ায় রপ্তানি কার্যক্রম আরও সহজ হয়েছে। প্রতি টন আলু ২৬০–২৮০ ডলারে রপ্তানি করা যাচ্ছে। তাছাড়া ডলারের বিনিময় হার বাড়ায় মুনাফাও বেড়েছে। সরকারিভাবে বিআরটিসির ট্রাকে কম খরচে বন্দরে আলু পৌঁছানোর ব্যবস্থাও বড় সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

কোথায় যাচ্ছে বাংলাদেশের আলু?

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ আলু রপ্তানি হয় মালয়েশিয়ায়। এছাড়া সিঙ্গাপুর, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, বাহরাইনসহ মোট ১৪টি দেশে আলু যাচ্ছে। আগে রাশিয়ায়ও রপ্তানি হতো, তবে বর্তমানে সেখানে রপ্তানি প্রায় বন্ধ।

রপ্তানিতে প্রতিবন্ধকতা: উপযুক্ত জাতের অভাব

বাংলাদেশে রপ্তানি উপযোগী আলুর জাতের ঘাটতি এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। দেশে ৯১টি আলুর জাত থাকলেও, এর বেশিরভাগই আন্তর্জাতিক চাহিদা মেটাতে পারে না। কারণ, এগুলোর শুষ্ক পদার্থের পরিমাণ কম—যা চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই প্রভৃতি পণ্য তৈরিতে অকার্যকর এবং জ্বালানি খরচ বাড়ায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, সরকার এখন উচ্চ শুষ্ক পদার্থযুক্ত ও রপ্তানিযোগ্য জাত সম্প্রসারণে কাজ করছে। পাশাপাশি এমন কিছু জাত এসেছে, যেগুলোর উৎপাদন দ্বিগুণ হতে পারে।

রপ্তানিকারকরা জানাচ্ছেন, বিদেশি ক্রেতারা এমন জাত খোঁজেন যেগুলো লম্বাটে, পাতলা চামড়ার, সংরক্ষণযোগ্য এবং উচ্চ ফলনশীল। দেশের অধিকাংশ জাতেই এসব বৈশিষ্ট্য নেই। এছাড়া আলুতে "হলোহার্ট" রোগের উপস্থিতিও রপ্তানির প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে, যা অনিয়ন্ত্রিত সার ও সেচ ব্যবস্থার ফলে ঘটে।

রপ্তানির দৌড়ে নেই বাংলাদেশ

আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ সপ্তম হলেও, রপ্তানির অনুপাতে কখনোই এক শতাংশ অতিক্রম করেনি। বিশ্বে যেখানে আলু রপ্তানির বার্ষিক গড় হার ৬.২৫ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশের অবদান নেই বললেই চলে।
অন্যদিকে, পাকিস্তান বছরে প্রায় ১০ লাখ টন আলু রপ্তানি করে, যা তাকে বিশ্বে পঞ্চম রপ্তানিকারক হিসেবে স্থান দিয়েছে, যদিও উৎপাদনে দেশটির অবস্থান নবম।

বাংলাদেশে আলু রপ্তানিতে এ বছর নতুন করে আশাবাদ তৈরি হলেও, রপ্তানিতে টেকসই উন্নতির জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। রপ্তানিযোগ্য জাতের অভাব, সংরক্ষণের সুবিধা, এবং আন্তর্জাতিক মানের অনুসরণ না করলে উৎপাদনের বিপরীতে রপ্তানি সম্ভাবনা অপূর্ণই থেকে যাবে।

Advertisement
Advertisement

আরো পড়ুন  


Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531