ঢাকা,  বুধবার
২৯ অক্টোবর ২০২৫

Advertisement
Advertisement

তাইওয়ানের যে সিরাম ব্যবহারে মাত্র ২০ দিনে গজাবে চুল

প্রকাশিত: ১৯:১২, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

তাইওয়ানের যে সিরাম ব্যবহারে মাত্র ২০ দিনে গজাবে চুল

টাক

কল্পনা করুন তো, এমন একটি সিরাম যা মাথায় ঘষলেই মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে নতুন চুল দেখা যাবে। যা এতদিন কল্পবিজ্ঞানের মতো শোনাচ্ছিল, তাই এখন সত্যি হতে চলেছে। ন্যাশনাল তাইওয়ান ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা এমন একটি সিরাম তৈরি করেছেন, যা টাকওয়ালা ইঁদুরের শরীরে প্রায় ২০ দিনের মধ্যে আবার সম্পূর্ণ লোম ফিরিয়ে এনেছে। এই আবিষ্কার টাক সমস্যার স্থায়ী সমাধানের আশা জাগাচ্ছে।

কীভাবে কাজ করে এই সিরাম?

'সেল মেটাবলিজম' নামক জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাটিতে বিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করেছেন যে, চুলের ফলিকল বা গোড়া থেকে কীভাবে নতুন চুল গজায়। তারা লক্ষ্য করেছেন, ত্বকে কোনো আঘাত লাগলে বা হালকা জ্বালাপোড়া হলে, শরীরের রোগ প্রতিরোধক কোষ (ম্যাক্রোফেজ) ত্বকের নিচে থাকা চর্বি কোষের (এডিপোস টিস্যু) কাছে ছুটে যায়। এই কোষগুলো তখন মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড নিঃসরণ করার জন্য সংকেত পাঠায়। ওলিক অ্যাসিড এবং পামিটোলিক অ্যাসিডের মতো এই ফ্যাটি অ্যাসিডগুলো চুলের গোড়ায় থাকা স্টেম সেলকে পুষ্টি জোগায় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

বিজ্ঞানীরা ত্বকে জ্বালাপোড়া তৈরির পরিবর্তে, সরাসরি এই ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত সিরাম ব্যবহার করেছেন। ন্যাশনাল তাইওয়ান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক লিন সাং-জান বলেন, "আমরা দেখেছি যে, শুধুমাত্র এই বিশেষ ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড, যেমন ওলিক অ্যাসিড এবং পামিটোলিক অ্যাসিড, ত্বকে লাগালেই নতুন চুল গজানো সম্ভব।" প্রায় ২০ দিনের মধ্যেই ইঁদুরের ওপর করা পরীক্ষায় নতুন চুল গজাতে দেখা গেছে।

এই আবিষ্কারের মানে কী?

এই ফলাফল অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। এটি এমন একটি টপিক্যাল বা বাহ্যিক ব্যবহারের চিকিৎসা, যা চুল পড়ার প্রচলিত বিভিন্ন পদ্ধতির (যেমন সার্জারি, ফিনাস্টেরাইড বা মিনোক্সিডিল) সীমাবদ্ধতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়িয়ে যেতে পারে। এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এবং শরীরের চর্বি কোষের বিপাক প্রক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে তৈরি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই ফ্যাটি অ্যাসিডগুলো আমাদের শরীরে প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হয় এবং বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ তেলেও পাওয়া যায়, যা একে একটি নিরাপদ বিকল্প হিসেবে তুলে ধরেছে।

তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও মনে রাখতে হবে। এই গবেষণাটি এখনও পর্যন্ত শুধু ইঁদুরের ওপর (এবং মানুষের চুলের ফলিকলের ওপর কিছু ল্যাব টেস্ট) করা হয়েছে, মানুষের ওপর এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এখনো শুরু হয়নি। একজন বিশেষজ্ঞ নিউজউইককে জানিয়েছেন, "মানুষের মাথায় প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি চুল এমনিতেই 'গ্রোয়িং ফেজ' বা বৃদ্ধির পর্যায়ে থাকে... তাই বিশ্রামে থাকা চুলের ফলিকলকে জাগিয়ে তুললে খুব নাটকীয় পরিবর্তন হয়তো দেখা যাবে না।"

পরবর্তী ধাপগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আর তা হলো মানুষের মাথার ত্বকে এর পরীক্ষা, সঠিক পরিমাণ ও ব্যবহারবিধি নির্ধারণ এবং চুল পড়ার বাস্তব সমস্যায় এর কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা যাচাই করা।

এটি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে?

যদি এই পদ্ধতি মানুষের ক্ষেত্রেও সফল হয়, তবে এটি চুল পড়ার চিকিৎসায় এক নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। হরমোনের পরিবর্তন (ফিনাস্টেরাইড) বা ছোটখাটো সার্জারির ওপর নির্ভর না করে, শুধুমাত্র একটি সাধারণ ফ্যাটি অ্যাসিড সিরাম ব্যবহার করেই ঘুমন্ত চুলের ফলিকলকে জাগিয়ে তোলা সম্ভব হতে পারে। খরচ, সুবিধা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দিক থেকেও এটি অনেক বেশি আকর্ষণীয় হতে পারে।

গবেষক দল ইতিমধ্যেই এই ফর্মুলার পেটেন্ট নিয়ে নিয়েছে এবং এখন মানুষের ওপর ট্রায়ালের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা জোর দিয়ে বলেছেন যে, প্রাথমিক ফলাফল বেশ শক্তিশালী হলেও এটি এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। ত্বক ও চুল বিশেষজ্ঞরা ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিচ্ছেন, কারণ ইঁদুরের ওপর সফল হওয়া অনেক 'অলৌকিক' গবেষণাই মানুষের ক্ষেত্রে সবসময় সফল হয় না।

Advertisement
Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531