খলিল-দোভাল
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে দ্বিপক্ষীয় প্রধান ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা করেন তারা।
বুধবার বৈঠকের পর দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, সপ্তম কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভের (সিএসসি) জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে ড. খলিলের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছে।
অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠকে সিএসসির কার্যক্রম ও গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। ভারতের এনএসএকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান নিরাপত্তা উপদেষ্টা।
এর আগে চলতি বছরের এপ্রিলে থাইল্যান্ডে বিমসটেক সম্মেলনের নৈশভোজে বৈঠক করেছিলেন তারা।
সূত্র জানায়, ড. খলিল ও অজিত দোভালের বৈঠকটি গতকাল সকালের দিকে অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় আধা ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠকটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে দুজনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। দিল্লি যাওয়ার আগে ড. খলিল ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার বাসভবনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করে এসেছেন।
জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর এটি অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উপদেষ্টার ভারতের দ্বিতীয় সফর। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইন্ডিয়া এনার্জি উইকে অংশ নিতে জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সফর করেছিলেন।
দুই দেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের মধ্যে বৈঠকটি এমন সময় অনুষ্ঠিত হয়েছে, যখন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই দিল্লির কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতে অনুরোধ করেছে। আর আইসিটি আদালতের রায়ের পর নোট ভারবালের (কূটনৈতিক পত্র) মাধ্যমে দণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে প্রত্যপর্ণের জন্য দিল্লিকে অনুরোধ করা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
সূত্র জানায়, কূটনৈতিক পত্র প্রস্তুত হয়ে গেছে। তবে তা দিল্লির কাছে এখনও পৌঁছায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার ফয়সাল মাহমুদ সমকালকে বলেন, প্রত্যর্পণের বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি পৌঁছানোর বিষয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কূটনৈতিক বিভাগ থেকে প্রেস বিভাগে এখনও কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। তথ্য দেওয়া হলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।
এদিকে গতকাল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সিএসসির এনএসএর সপ্তম সভা বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে। ভারতের এনএসএ অজিত ডোভাল মালদ্বীপ, মরিশাস, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশসহ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর এনএসএদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
সিএসসির বৈঠকে সেশেলস একটি পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হিসেবে অংশগ্রহণ করবে এবং মালয়েশিয়াকে অতিথি রাষ্ট্র হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
সিএসসির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের ষষ্ঠ বৈঠক ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মরিশাসে অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া সদস্য রাষ্ট্রগুলো ২০২৪ সালের আগস্টে শ্রীলঙ্কায় সিএসসির প্রতিষ্ঠা দলিল সই অনুষ্ঠানে একত্রিত হয়েছিল। সিএসসি দেশগুলোর উপজাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারাও (ডিএনএসএ) নিয়মিত বিরতিতে বৈঠক করে থাকেন। ডিএনএসএর শেষ সভা ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়।
নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা বাড়াতে এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলে আঞ্চলিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য অংশীদারিত্ব জোরদার করতে সিএসসি গঠন করা হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি এবং উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক সংস্থার সপ্তম বৈঠক সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতার বিভিন্ন স্তম্ভের কার্যক্রম পর্যালোচনা করতে পারবে। ২০২৬ সালের জন্য রোডম্যাপ, কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি সামুদ্রিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা; সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদ দমন; ট্রান্সন্যাশনাল অপরাধ দমন; সাইবার নিরাপত্তা ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো সুরক্ষা, মানবিক সহায়তা এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ নিয়ে সিএসসির সপ্তম সভায় আলোচনা হবে।
এর আগে ২০২৪ সালের মে মাসে সিএসসির সদস্য হতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ভারত। সে সময় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফরের সময় এ প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বৃহত্তর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সামুদ্রিক প্রতিবেশী দেশগুলোর কৌশলগত সহযোগিতা জোরদার করতে ২০১১ সালে শ্রীলঙ্কার উদ্যোগে ‘কলম্বো সিকিওরিটি কনক্লেভ’ গঠন হয়। তখন এর সদস্য ছিল তিনটি দেশ– শ্রীলঙ্কা, ভারত ও মালদ্বীপ। ভারত ও মালদ্বীপের মধ্যে টানাপোড়েনের কারণে ২০১৪ সালের পর সিএসসি এক প্রকার অকার্যকর থাকে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের নৌবাহিনীর উপস্থিতি ও বাড়তে থাকা প্রভাব মোকাবিলায় এটি গঠন করা হয়। সিএসসির মূল ভূমিকা ভারতই পালন করে।
আবার এটি কার্যকর হয় ২০২০ সালে। এরপর পর্যবেক্ষক হিসেবে মরিশাস, বাংলাদেশ ও সেশেলসকে এতে যুক্ত করা হয় এবং ২০২১ সালে কলম্বোতে একটি সচিবালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। পরের বছর মরিশাস এর সদস্য হয়। সদস্য রাষ্ট্রের পাশাপাশি বাংলাদেশ এর বৈঠকগুলোতে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়মিত অংশ নিয়েছে।
২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায় সরকারের পতন এবং ২০২৩ সালে মালদ্বীপে ভারতবিরোধী সরকারের কারণে সিএসসি জোটের আধিপত্য ও প্রভাব কমে আসে দিল্লির। তাই দিল্লির হাত শক্ত করতে ২০২৪ সালে এতে বাংলাদেশকে যুক্ত করে। আর একই বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সিএসসিতে ভারসাম্য আনার চেষ্টায় রয়েছে ভারত। সেশেলস এখনও এর পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হিসেবে যুক্ত রয়েছে।



.png)
.png)