
লোড শেডিং
দেশে গ্রীষ্মের দাবদাহ ধীরে ধীরে তীব্র হয়ে উঠছে। একদিকে বিদ্যুতের চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী, অন্যদিকে সরকার এবার পুরোনো বৈষম্যবাদী কৌশল থেকে সরে এসে বিদ্যুৎ সরবরাহে শহর ও গ্রামের মধ্যে সমতা আনার ঘোষণা দিয়েছে। আগের বছরগুলোতে রাজধানী ঢাকাসহ শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ অগ্রাধিকার পেত, অথচ গ্রামীণ জনপদ ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের শিকার হতো। এবার সেই ধারা ভাঙছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, জাতীয় গ্রিডের ওপর চাপ কমাতে স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদকদের (IPPs) হেভি ফুয়েল অয়েল (HFO)–চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আবার চালু করা হচ্ছে। এসব কেন্দ্র সাধারণত উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ার কারণে সচল রাখা হয় না, কিন্তু জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় এগুলোর টারবাইন চালু রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অর্থায়নে অগ্রাধিকার
বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এলএনজি আমদানিতে অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে ২,৪০০ কোটি টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সরবরাহকারীদের পুরোনো পাওনাও পরিশোধ করা হয়েছে। কেবল শেভরনের পাওনা ছিল ৫৩২ মিলিয়ন ডলার, যা সম্প্রতি পরিশোধ করে দেওয়া হয়েছে।
উৎপাদনের সক্ষমতা ও বাস্তবতা
দেশে বর্তমানে ১৪০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্মিলিত উৎপাদন সক্ষমতা ২৭,০১৩ মেগাওয়াট। এর মধ্যে:
-
৫৫টি এইচএফও চালিত কেন্দ্র: ৫,৬৬৩ মেগাওয়াট
-
৫টি ডিজেলচালিত: ৬২২ মেগাওয়াট
-
৫৭টি গ্যাসচালিত: ১১,৬২৫ মেগাওয়াট
-
৭টি কয়লাভিত্তিক: ৫,৬০৩ মেগাওয়াট
-
১টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র: ২৩০ মেগাওয়াট
-
১৫টি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র: ৭৬২ মেগাওয়াট
-
ভারত থেকে আমদানি: ২,৫০৮ মেগাওয়াট
তবে বিদ্যুৎ বিভাগ সতর্ক করে বলেছে, গ্রীষ্মের দাবদাহ যদি ৪২–৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়, বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে ১৭,৫০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। তখন প্রতিদিন ২,৫০০–৩,০০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে।
ব্যয়বহুল তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ: এক বাস্তবতা
এইচএফও ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি ইউনিটে খরচ হয় ৩৫–৪৫ টাকা। তুলনামূলকভাবে, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ ১৫ টাকা এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ ১২–১৩ টাকায় উৎপাদিত হয়। তাই এই ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ উৎপাদন আইএমএফ–এর ভর্তুকি কমানোর শর্ত পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তারপরও সরকার পরিস্থিতি মোকাবেলায় এই ব্যয় মেনে নিচ্ছে।
নীতিগত পরিবর্তন: ঢাকাকে নয়, দেশকে অগ্রাধিকার
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, "আমরা ঢাকাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার নীতি প্রত্যাখ্যান করেছি। শহর ও গ্রামে এবার সমানভাবে লোডশেডিং ভাগ হবে।"
এটি বিদ্যুৎ নীতিতে এক বড় দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সামনে কী?
ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন শীর্ষ চাহিদা মোকাবেলায় শিগগিরই বৈঠকে বসবে সরকার। উচ্চতর উৎপাদন সক্ষমতার কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত থাকলেও গ্যাস সংকট, ট্রান্সমিশন দুর্বলতা ও অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।