
ভারত
ভারতের সপ্তম শ্রেণির সমাজবিজ্ঞান পাঠ্যবই থেকে মোগল এবং দিল্লির সুলতানি আমলের ইতিহাস বাদ দিয়ে নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে প্রাচীন ভারতীয় সাম্রাজ্য ও সমসাময়িক সরকারি উদ্যোগের কথা। ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (NCERT) নতুন শিক্ষানীতির (NEP 2020) আলোকে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য এই পরিবর্তন এনেছে।
আগের পাঠ্যবইয়ে মোগল ও সুলতানি সাম্রাজ্য নিয়ে ছিল দুটি আলাদা অধ্যায়, যেখানে মুহাম্মদ বিন তুঘলক, ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজি, মামলুক রাজবংশ, এবং ইব্রাহিম লোদির মতো ঐতিহাসিক শাসকদের জীবন ও শাসনব্যবস্থা তুলে ধরা হতো। নতুন সংস্করণে এই অধ্যায় দুটি সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে দিয়ে সেখানে যুক্ত করা হয়েছে মগধ, মৌর্য, শুঙ্গ সাম্রাজ্যসহ কয়েকজন প্রাচীন ভারতীয় শাসকের ইতিহাস।
তবে শুধু ইতিহাস নয়, নতুন বইয়ে ২০২৫ সালে উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজে অনুষ্ঠিতব্য কুম্ভমেলা, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’, ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ প্রকল্প, অটল টানেল, এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও এ. পি. জে. আবদুল কালাম– এসব বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
এনসিইআরটি জানিয়েছে, প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যক্রমে বড় রকমের সংস্কার চলছে। এর লক্ষ্য—ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ‘ভারতীয় মূল্যবোধ’, ‘জাতীয় গর্ব’, এবং ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর ভাবনা জাগিয়ে তোলা। নতুন বইগুলো এনসিইআরটির নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের কেন্দ্রীয় বোর্ডের (CBSE) অধীন স্কুলগুলোতে প্রয়োগ করা হবে।
গত কয়েক বছরে এনসিইআরটি ধাপে ধাপে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন এনেছে। কোথাও মোগল যুগ, কোথাও ডারউইনের বিবর্তনবাদ, আবার কোথাও নারী আন্দোলনের ইতিহাস সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই পরিবর্তনগুলোকে অনেকে দেখছেন “ইতিহাসের পুনর্লিখন” হিসেবে।
বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়া:
সমালোচকদের মতে, ইতিহাসের কিছু নির্দিষ্ট অধ্যায় বাদ দিয়ে বেছে বেছে কিছু অংশকে সামনে আনা হচ্ছে—যা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই মনে হচ্ছে। আবার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, “পাঠ্যবইকে আরও আধুনিক, সংস্কৃতিমূলক এবং জাতীয়তাবাদী চেতনায় সমৃদ্ধ করা হচ্ছে।”
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন:
-
মোগল ও সুলতানি ইতিহাস বাদ দিলে ভারতীয় ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ যুগকে শিক্ষার্থীরা না-জেনে বড় হবে কি না?
-
পাঠ্যবইয়ে বর্তমান সরকারের প্রকল্প ও কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত করা কি শিক্ষা নয়, প্রচারণা?
-
শিক্ষাব্যবস্থার এই রূপান্তর কতটা শিক্ষামূলক, আর কতটা রাজনৈতিক?
ইতিহাসের উপস্থাপন কোন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে করা হচ্ছে—এখন সেটাই ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার আলোচনার কেন্দ্রে।