
পাকিস্তান
কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক নতুন করে আরও সংকটময় হয়ে উঠেছে। হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর নয়াদিল্লি পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। হামলার প্রতিক্রিয়ায় উভয় দেশ পাল্টাপাল্টি কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে, যার সর্বশেষ নজির—দুই দেশের মধ্যে আকাশসীমা ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, ছয় দিন আগে পাকিস্তান ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন সংস্থাগুলোর জন্য আকাশসীমা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এবার ভারতও পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তানি নিবন্ধিত বিমান এবং পাকিস্তানের এয়ারলাইনস পরিচালিত ও ভাড়া করা সব ধরনের বেসামরিক ও সামরিক বিমানের জন্য আকাশপথ বন্ধ ঘোষণা করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা প্রাথমিকভাবে ২৪ মে ভোর ৫টা ২৯ মিনিট পর্যন্ত বলবৎ থাকবে, তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী তা বাড়তেও পারে।
ভারতের এই সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে নোটাম (নোটিশ টু এয়ার মিশন) আকারে জারি করা হয়েছে, যাতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের কোনো বিমান ভারতের আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারবে না। এর ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ওশেনিয়াগামী পাকিস্তানি ফ্লাইটগুলোকে বিকল্প দীর্ঘ পথ বেছে নিতে হবে, যা আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত পাকিস্তানি বিমান সংস্থাগুলোর ওপর বড় চাপ ফেলবে এবং ভ্রমণের সময়ও বাড়িয়ে দেবে।
এই উত্তেজনার সূচনা হয় জম্মু-কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র পেহেলগামে একটি সন্ত্রাসী হামলার মধ্য দিয়ে, যেখানে সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। ভারত দাবি করে, পাকিস্তান এই হামলার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। ঘটনাটি ঘটে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের এক উসকানিমূলক বক্তব্যের কয়েক দিন পর।
এই হামলার পর নয়াদিল্লি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একের পর এক কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত, পাকিস্তান হাইকমিশনের সামরিক কূটনীতিকদের ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা, সীমান্ত পোস্ট বন্ধ, এবং সব পাকিস্তানি নাগরিকের ভিসা বাতিল।
জবাবে পাকিস্তানও ভারতীয় পণ্য আমদানিসহ সব ধরনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য স্থগিত করেছে এবং ভারতীয় বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করেছে। ইসলামাবাদ দাবি করেছে, তারা সিমলা চুক্তিসহ অতীতের সব দ্বিপক্ষীয় চুক্তি পুনর্বিবেচনার অধিকার রাখে। দুই দেশের মধ্যকার এই উত্তেজনা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।