
সেনাবাহিনী
জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বিপজ্জনকভাবে বেড়েছে, যা সামরিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশ্বের নানা দেশ — বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন — দুই দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে।
তবে প্রভাবশালী মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, ভারত এখন সংঘাত এড়ানোর চেষ্টা নয়, বরং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে টানা যোগাযোগ রেখে চলেছেন এবং দিল্লিতে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন — তবে উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিক সহায়তা চাওয়া নয়, বরং পাকিস্তানে সামরিক অভিযান চালানোর যৌক্তিকতা তুলে ধরা।
কাশ্মির সীমান্তে ইতিমধ্যে ছোট অস্ত্র দিয়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। নিরাপত্তা বাহিনী কাশ্মিরে ব্যাপক ধরপাকড় চালাচ্ছে এবং শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভারতের পানি প্রবাহ বন্ধের সিদ্ধান্ত ও পাকিস্তানি কূটনীতিকদের বহিষ্কারের মতো পদক্ষেপ দুই দেশের সম্পর্কে আরও উত্তেজনা বাড়িয়েছে।
পাকিস্তানও এর পাল্টা জবাবে এলওসি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্থগিত করেছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বৈরিতির পটভূমিতে কাশ্মিরের বাইরে কাশ্মিরি শিক্ষার্থীরা ব্যাপক হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
গুরুত্বপূর্ণভাবে, হামলার পাঁচ দিন পরও ভারত সরকার কোনও নির্দিষ্ট সন্ত্রাসী সংগঠনের নাম প্রকাশ করেনি এবং পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার পক্ষে দৃঢ় প্রমাণও সামনে আনেনি। ভারতীয় কর্মকর্তারা অতীতের অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে পাকিস্তানের ভূমিকা তুলে ধরছেন এবং কিছু প্রযুক্তিগত প্রমাণ থাকার কথা বলছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারতের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি বেড়ে যাওয়ায় এখন আন্তর্জাতিক চাপকে আগের মতো গুরুত্ব দিচ্ছে না দিল্লি। বড় শক্তিগুলো — বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র — দক্ষিণ এশিয়া সংকটে আপাতত সরাসরি জড়িত হতে অনাগ্রহী বলে মনে হচ্ছে।
২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার স্মৃতি এখনও টাটকা, যখন ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা চালিয়েছিল এবং তার পাল্টায় পাকিস্তান একটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে পাইলটকে আটক করেছিল। এবারও বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত "বড় ধরনের কিছু" করতে পারে, তবে পাকিস্তানও পাল্টা আঘাতের হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞ ড্যানিয়েল মার্কির মতে, উভয় দেশই নিজেদের সংকট নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতাকে অতিমূল্যায়ন করছে, যা পরিস্থিতি দ্রুত হাতের বাইরে চলে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি করছে।
সাবেক ভারতীয় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শঙ্কর মেনন বলেন, মোদি সরকারের জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া এখন রাজনৈতিকভাবে প্রায় বাধ্যতামূলক হয়ে উঠেছে, যদিও তিনি আশা করছেন দুই পক্ষই সংঘাতের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখবে।
বর্তমানে "রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট" নামে এক অজ্ঞাত গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করলেও ভারত সন্দেহ করছে এটি পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার ছায়া সংগঠন হতে পারে।
সবমিলিয়ে, কাশ্মিরকে ঘিরে ভারত ও পাকিস্তানের উত্তপ্ত পরিস্থিতি এখন এমন এক মোড় নিয়েছে, যেখানে সামান্য উস্কানিতেই বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। আন্তর্জাতিক মহলের আহ্বান সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়ায় যুদ্ধের আশঙ্কা ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে।