![রাইসির মৃত্যুর ঘটনার পেছনে কী কেউ আছে রাইসির মৃত্যুর ঘটনার পেছনে কী কেউ আছে](https://www.dikdorshon.com/media/imgAll/2023February/রাইসি-2405201558.jpg)
ইব্রাহিম রাইসি
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির নিহত হওয়ার ঘটনা স্বাভাবিক নাকি পরিকল্পিত না নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। ইরানে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার জন্য নেতৃত্ব দেন তিনি যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে কাজে লাগে। ইসরায়েলের ওপর প্রথমবারের মতো বড় ধরনের ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও তদারকি করেছিলেন তিনি।
রোববার (১৯ মে) উত্তর-পশ্চিম ইরানে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাইসির অপ্রত্যাশিত মৃত্যু হয়। দ্য ইকোনোমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়। প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুতে দেশের অভ্যন্তরে ক্ষমতার লড়াই শুরু হতে পারে এবং গোটা মধ্যপ্রাচ্যে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। তার আকস্মিক অনুপস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ও সংঘাতের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যকে বিপর্যস্ত করতে পারে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃষ্টি ও ঘন কুয়াশাসহ বৈরী আবহাওয়ার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু রাইসির বেশ কিছু সিদ্ধান্ত এবং দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হচ্ছে তা বিবেচনায় নিয়ে ধারণা করা হচ্ছে কোন অপশক্তি এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। প্রশ্ন উঠেছে দেশীয় প্রতিপক্ষ বা ইসরায়েলের মতো দেশ জড়িত থাকতে পারে কিনা তা নিয়ে।
সাম্প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে উত্তেজনার প্রসঙ্গ নিয়ে কিছু ইরানি বিশ্বাস করেন, ইসরায়েল এই দুর্ঘটনার পেছনে জড়িত থাকতে পারে। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোশাদ ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা এবং পরমাণু স্থাপনায় নিখুঁতভাবে হামলা চালানোর রেকর্ড রয়েছে। তবে কোন কোন বিশেষজ্ঞরা এটিকে অসম্ভব মনে করেন। কারণ ইসরায়েল ও মোশাদ ঐতিহ্যগতভাবে সামরিক ও পারমাণবিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করে, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দায়িত্বরত রাষ্ট্রনায়ক বা সরকারপ্রধানকে হত্যাচেষ্টা যুদ্ধ শুরু করার মতো অপরাধ। তাই ইরানের প্রেসিডেন্টকে হত্যা করা হলে তেহরানের পক্ষ থেকে বড় ধরনের প্রতিশোধমূলক হামলা আসা সুনিশ্চিত।
এদিকে, হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনাটি আঞ্চলিক উত্তেজনাকে উসকে দিতে পারে। কারণ লেবানন, সিরিয়া, ইরাক এবং ইয়েমেনে অবস্থানরত ইরানের সহযোগী বাহিনী এমন ঘটনায় ফের প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠবে যা এ অঞ্চলে ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পাল্টে দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের অনেকে এ ঘটনার নেপথ্যে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠমিত্র যুক্তরাষ্ট্রকেও দুষছেন। প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি যে হেলিকপ্টারে ছিলেন সেটি ছিল মার্কিন হেলিকপ্টার বেল টু ওয়ান টু মডেলের। যুক্তরাষ্ট্রের বেল টেক্সট্রন মহাকাশযান প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান প্রথম এটি তৈরি করে। ১৯৬৮ সালে কানাডার সশস্ত্র বাহিনী প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এই হেলিকপ্টার কেনে। হেলিকপ্টারটি ছিল মাঝারি আকারের যাতে পাইলটসহ ১৫ জন বসতে পারেন। তবে ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর ইরানের কাছে এমন কোনো হেলিকপ্টার যুক্তরাষ্ট্র বিক্রি করেনি- এমন তথ্যও উঠে এসেছে গণমাধ্যমে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, এর আগেও বেল টু ওয়ান টু মডেলের হেলিকপ্টার বেশ কয়েকবার দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। গত বছর সংযুক্ত আরব আমিরাত উপকূলে মারাত্মক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এই মডেলের একটি হেলিকপ্টার। এরও আগে, ২০১৮ সালে খোদ ইরানেই একই ধরনের দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান চারজন। মার্কিন এই হেলিকপ্টারের দুর্বলতা নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধমে উঠে প্রশ্ন। তেহরান কি হেলিকপ্টারের এই দুর্বলতা সম্পর্কে কিছু্ই জানতো না? সেই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে। না কি এর পেছনে দেশীয় কোন ষড়যন্ত্র রয়েছে সে দিকেও ইঙ্গিত দিচ্ছেন অনেকে।