দুই দশক ধরে তুরস্কের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে চলেছেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। প্রথমে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী, পরে প্রেসিডেন্ট। এবার তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। আগামী পাঁচ বছর দেশটির নেতৃত্ব দেবেন এরদোয়ান।
নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের বাইরে উপস্থিত সমর্থকদের উদ্দেশে এরদোয়ান বলেন, সাড়ে আট কোটি মানুষের পুরো জাতির জয় হয়েছে। এর পর ঐক্যের ডাক দেন তিনি।
এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হয়েছে অনেক নাটকীয়তা। ১৪ মে তুরস্কে প্রথম দফার ভোট গ্রহণ হয়। সেদিন ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ ভোট পান এরদোয়ান। কেমাল পান ৪৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ ভোট। তুরস্কের নির্বাচনী আইনে বলা আছে, কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট না পেলে নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় গড়াবে।
দ্বিতীয় দফার ভোটে ৯৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ ভোট গণনা শেষে এরদোয়ান পেয়েছেন ৫২ দশমিক ১৬ শতাংশ ভোট। আর কেমাল পেয়েছেন ৪৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ ভোট। সুতরাং এবার তার জয় ঠেকানো সম্ভব হয় না।
তুরস্কের ইতিহাসে এবারই প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় গড়ায়। নির্বাচন এবং ভোটের ফলাফলের এই চিত্র দেশটির সমাজে বিদ্যমান বিভাজনের দৃশ্যপট আমাদের সামনে তুলে ধরছে।
ফলাফল ঘোষণার পর প্রাসাদের সামনে জড়ো হয় ৩ লাখের বেশি সমর্থক। তাদের উদ্দেশে এরদোয়ান বলেন, এটা তুরস্কের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এতে শুধু আমরাই জয় পাইনি, পুরো তুরস্ক জিতেছে।
তুরস্কের বর্তমান অর্থনীতির গতি ফেরানোর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছেন এরদোয়ান। তিনি বলেছেন, মূল্যস্ফীতি মোকাবিলা করা এখন তুরস্কের জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে এরদোয়ান প্রস্তুত আছেন কি না? কারণ ইতিমধ্যে এর বার্ষিক হার ৪৪ শতাংশে পৌঁছেছে। দেশের প্রায় প্রত্যেকের জীবনে উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়েছে। বাড়তি দামে খাবার কিনতে হচ্ছে জনগণকে। বেড়ে গেছে বাড়িভাড়া। নিত্যপণ্যের দামও আকাশছোঁয়া।
এদিকে এরদোয়ানের জয়ের খবরে ইস্তাম্বুলের তাকসিম স্কয়ারে অনেক বিদেশিকে উল্লাস করতে দেখা গেছে। তাদের বেশির ভাগ মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় দেশগুলোর নাগরিক। তিউনিসিয়া নাগরিক আলা নাসার বলেন, রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান শুধু নিজ দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখেননি, তিনি আরব ও মুসলিম বিশ্বকে সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছেন।
এরদোয়ানের বিরোধীরা এখন কী করবেন। বলা হচ্ছে, আগামী বছর তুরস্কে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আগে তাদের নতুন করে সংগঠিত করা হবে। বর্তমানে কেমালের দলের দুজন আঙ্কারা ও ইস্তাম্বুলের মতো বড় ও গুরুত্বপূর্ণ শহরের মেয়র। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোয়ানের দলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে তাদের যে কাউকে সামনে আনা হতে পারে।